জনপ্রিয় হচ্ছে বাংলাদেশ-ভারত ট্রেন যোগাযোগ, বাড়ছে ট্রিপের সংখ্যাও

Uncategorized আন্তর্জাতিক


নিজস্ব প্রতিবেদক ঃ জনপ্রিয় হচ্ছে বাংলাদেশ-ভারত ট্রেন যোগাযোগ, বাড়ছে ট্রিপের সংখ্যাও যাত্রী চাহিদা বিবেচনায় নিয়ে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে চলাচল করা আন্তদেশীয় কয়েকটি ট্রেনের ট্রিপ বাড়াতে চায় বাংলাদেশ রেলওয়ে। ভারতেরও এতে আপত্তি নেই।

সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের সবুজ সংকেত পেলে দুদেশের মধ্যে চলাচল করা কয়েকটি ট্রেনের ট্রিপ সংখ্যা বাড়বে। তবে এ জন্য অবকাঠামোগত কিছু সংস্কারও করতে হবে। ট্রেনের ট্রিপ বাড়ানোর পাশাপাশি বন্ধন এক্সপ্রেসের ভাড়া কমানোর বিষয়টিও দুদেশের মধ্যে আলোচনা হয়েছে। উভয় দেশই বিষয়টি নিয়ে ইতিবাচক।

ঢাকা ও নিউ জলপাইগুড়ির মধ্যে মিতালি এক্সপ্রেস ট্রেনটি সপ্তাহে দুদিন চলে। বাংলাদেশ রেলওয়ে এই ট্রেনটি আরও একদিন বেশি চালানোর প্রস্তাব করেছে। একই সঙ্গে রাতে আরেকটি মৈত্রী ট্রেন চালানোর জন্য ভারতকে বলা হয়েছে।

সম্প্রতি নয়াদিল্লির রেল ভবনে অনুষ্ঠিত দুই দেশের মধ্যে রেলের অভ্যন্তরীণ বৈঠকে এসব বিষয়গুলো তুলে ধরা হয়। বৈঠকে অংশ নেয়া কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে। খুলনা ও কলকাতার মধ্যে চলাচল করে আন্তদেশীয় ট্রেন বন্ধন এক্সপ্রেস। এই রুটে খুলনা থেকে বেনাপোল হয়ে কলকাতার দূরত্বও খুব বেশি নয়। ফলে রেলপথের পাশাপাশি সড়কপথেও খুলনা থেকে কলকাতায় সরাসরি বাস চলাচল করে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে বাসের চেয়ে ট্রেনের ভাড়া কম থাকলেও এ ক্ষেত্রে বাসের চেয়ে ট্রেনের ভাড়া বেশি। তাই বন্ধন এক্সপ্রেসের বিষয়ে আলোচনা শেষে ভাড়া কমানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। তবে ভাড়া কমানোর আগে দুদেশের রেলওয়ের যৌথ কমিটি ভাড়ার বিষয়টি খতিয়ে দেখবে এবং ভাড়া কমানো হলে এই ট্রেনে যাত্রী বাড়বে কি না সেটাও পরীক্ষা করবে।

ভারতের সঙ্গে বৈঠকে অংশ নেয়া বাংলাদেশের রেলপথ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (আইন ও ভূমি) মো. ফারুকুজ্জামান গণমাধ্যমে বলেন, ‘বাংলাদেশের পক্ষ থেকে আমরা আন্তদেশীয় ট্রেনের ট্রিপ বাড়ানোর প্রস্তাব করেছি। ভারতও চাচ্ছে এসব ট্রেনের ট্রিপ বাড়ানো হোক। তারা এই বিষয়ে খুব আন্তরিক। উভয় দেশের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী খুব শিগগিরই আন্তদেশীয় ট্রেনের ট্রিপ বাড়বে।’

বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে বর্তমানে ৩টি আন্তদেশীয় ট্রেন চলাচল করছে। এর মধ্যে ঢাকা ও কলকাতার মধ্যে মৈত্রী এক্সপ্রেস সপ্তাহের ৫ দিন শুক্র, শনি, রবি, মঙ্গল ও বুধবার নিয়মিত চলাচল করছে। ঢাকা থেকে নিউ জলপাইগুড়ি রুটে মিতালি এক্সপ্রেস সপ্তাহে দুদিন সোম ও বৃহস্পতিবার চলছে। খুলনা-কলকাতা রুটে বন্ধন এক্সপ্রেস চলে সপ্তাহে দুদিন রবি ও বুধবার।

রেলওয়ে সূত্র জানায়, রাতে যাত্রী পরিহনের জন্য বাংলাদেশ রেলওয়ের পক্ষ থেকে আরেকটি রাত্রীকালীন মৈত্রী ট্রেন চালানোর অনুরোধ করা হয়েছে এবং সেটি অবশ্যই ভারতীয় রেল দিয়ে। রাতের ট্রেনের অনুমতি দেয়ার বিষয়ে একমত হয়েছে ভারতীয় রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ।

ভারতীয় রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, বিষয়টি নিয়ে তারা তাদের সব অংশীজনের সঙ্গে পরামর্শ করে প্রস্তাবটি পরীক্ষা করে দেখবে। তা ছাড়া রাতের বেলা সীমান্তে চেকের বিষয়টিও পরীক্ষা করা দরকার হবে, বিশেষ করে কলকাতা থেকে ঢাকা আসার সময়।

এর আগে গত জুলাইয়ে রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজনের সঙ্গে দেখা করতে গিয়ে ঢাকায় ভারতের সদ্য সাবেক হাইকমিশনার বিক্রম দোরাইস্বামী জানিয়েছিলেন, ‘যাত্রী চাহিদা বিবেচনা করে ঢাকা-কলকাতার মধ্যে দর্শনা হয়ে আরেকটি ট্রেন চালানো যেতে পারে।’

মিতালি ট্রেনের ট্রিপ বাড়ানোর বিষয়ে জানা গেছে, ট্রেনটি ঢাকা জলপাইগুড়ি রুটে ট্রেনটি সপ্তাহে দুদিন চলছে। বাংলাদেশ রেলওয়ে চাচ্ছে আরেক দিন বাড়িয়ে সপ্তাহে তিন দিন চালানোর। এই বিষয়ে উভয় দেশের মধ্যে আলোচলা হয়েছে বৈঠকে।

এদিকে ঢাকা থেকে মিতালি এক্সপ্রেসে ট্রেনটি রাতে যাত্রা করে। তাই এই ট্রেনের যাত্রীদের সুবিধার জন্য ট্রেনে বিছানা সরবরাহ করতে ভারতকে অনুরোধ করেছে বাংলাদেশ। উভয় পক্ষের মধ্যে আলোচনার পর সিদ্ধান্ত হয়েছে ভারত মিতালি এক্সপ্রেস ট্রেনে বিছানা সরবরাহ করবে। এ সিদ্ধান্ত আগামী ১৫ দিনের মধ্যে কার্যকর হবে।

এ ছাড়া মিতালী এক্সপ্রেসে ভ্রমণের জন্য নিউ জলপাইগুড়ির ভিসা পেতে বাংলাদেশিদের অসুবিধার কথাও তুলে ধরা হয়েছে। ঢাকা ছাড়া অন্য কোনো ভিসা অফিস থেকে নিউ জলপাইগুড়ির ভিসা পাচ্ছে না যাত্রীরা।

রেলওয়ে সূত্র আরও জানায়, আন্তদেশীয় মালবাহী ট্রেনের সময় বাড়ানোর বিষয়েও বাংলাদেশ জোর দিয়েছে। সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্তের পরিবর্তে দর্শনা-গেদে, বেনাপোল-পেট্রাপোল এবং রোহনপুর-সিঙ্গাবাদ সীমান্ত হয়ে মালবাহী ট্রেন পরিচালনার সময় ২৪ ঘণ্টা পর্যন্ত বাড়ানোর কথা তুলেছে বাংলাদেশ।

ভারতের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশ অংশে লুপ লাইন (অতিরিক্ত লাইন) কম থাকে। লুপ লাইন বাড়ানোর ওপর গুরুত্ব দিয়েছে তারা। ভারতের প্রস্তাবে সায় দিয়ে বাংলাদেশ রেলওয়ের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, বিভিন্ন সেকশনে লুপ লাইন বাড়ানোর কাজ হচ্ছে। বিশেষ করে পার্বতীপুর ইয়ার্ড এবং ঈশ্বরদী-সিরাজগঞ্জ সেকশনে লুপ লাইন বাড়ানোর কাজ হাতে নেয়া হয়েছে।

সার্বিক বিষয়ে যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ ও বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) অধ্যাপক মো. হাদিউজ্জামান গণমাধ্যমে বলেন, ‘যাত্রী চাহিদা থাকলে আন্তদেশীয় ট্রেনের সংখ্যা বাড়ানো যেতে পারে। কিন্তু শুধু ট্রেনের সংখ্যা বাড়ালেই হবে না। রেলের কোচ, ইঞ্জিনের সংকটের দিকে আগে নজর দিতে হবে।

লাইনগুলোকে ব্রডগেজ ডাবল লাইনে রূপান্তর করতে হবে, না হলে ট্রেন চালিয়ে যথাযথ উপযোগিতা মিলবে না। এ ছাড়া সীমান্তে চেকিংয়ের সময় যাত্রীদের অনেক অপেক্ষা করতে হয়। এসব বিষয়েও নজর দিতে হবে। তবে রেলকে লাভজনক করতে হলে আন্তদেশীয় মালবাহী ট্রেন পরিচালনার ওপর জোর দিতে হবে। এ জন্য আগেই অবকাঠামো প্রস্তুত করতে হবে। রেলের কনটেইনার ডিপোর সক্ষমতা বাড়াতে হবে।’


বিজ্ঞাপন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *