বাংলাদেশে গণতন্ত্র নয় আওয়ামী লীগ প্লাসতন্ত্র চলছে———-গোলাম মোহাম্মদ কাদের

Uncategorized আইন ও আদালত জাতীয় ঢাকা বিশেষ প্রতিবেদন রাজনীতি

 

নিজস্ব প্রতিবেদক  : জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান ও বিরোধীদলীয় উপনেতা জনবন্ধু গোলাম মোহাম্মদ কাদের এমপি বলেছেন, এখন “আওয়ামী লীগ প্লাস” সারাদেশে লুটপাট চালাচ্ছে। সাধারণ মানুষকে তারা ক্রীতদাসে পরিণত করেছে। আওয়ামী লীগ প্লাস মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের ও বিপক্ষের ধুয়া তুলে জাতিকে বিভক্ত করে রাখছে।


বিজ্ঞাপন

নিজ দলের মানুষকে সুবিধা দিতে জাতির মাঝে বিভাজন সৃষ্টি করেছে। স্বাধীনতার বিরোধীতা যারা করেছে তাদের অনেকেরই ফাঁসি হয়ে গেছে। আর যারা ছিলেন তাদের অনেকেরই এই ৫২ বছরে মৃত্যু হয়েছে।


বিজ্ঞাপন

তাহলে স্বাধীনতার বিপক্ষের লোক কোথায়? এখন যারা আছেন তাদের তো বেশির ভাগেরই জন্ম স্বাধীনতার পরে। আওয়ামী লীগের নেতারা বলেন, আমরা নাকি গণতন্ত্রের সবক দেই। গণতন্ত্র হচ্ছে জনগণের তন্ত্র, জনগণই রাজার ভূমিকা পালন করবে। জনগণই নির্বাচিত করবে, জনগণের সরকার। সেই সরকার কাজ করবে জনগনের জন্য, এটাই গণতন্ত্র। বর্তমানে কী এটা আছে? জাতিকে বিভক্ত করে নিজেদের লোক দিয়ে একটি গোষ্ঠি সৃষ্টি করেছে তার নাম হচ্ছে “আওয়ামী লীগ প্লাস”।

আওয়ামী লীগে সাথে যারা আছেন ডিসি, এসপি, পুলিশ, প্রশাসন নির্বাচন কমিশন, মানবাধিকার কমিশনসহ সবাই। যারা আওয়ামী লীগ করেন, যারা আওয়ামী লীগের কথা বলেন, যারা আওয়ামী লীগের হয়ে কাজ করেন এবং আওয়ামী লীগের শ্লোগান দেন এরাই একটি দল হয়েছে “আওয়ামী লীগ প্লাস”। তারা পবিত্র সংসদকে কুক্ষিগত করেছে। কয়েকদিন আগে আওয়ামী লীগের এক প্রভাবশালী কর্মকর্তা যেভাবে বললেন, এক প্রধান বিচারপতিকে আমরা নামিয়ে দিয়েছি। এখন মনে হচ্ছে, বিচার বিভাগকেও তারা আওয়ামী লীগ প্লাসের আওতায় আনতে চেষ্টা করছে। অথচ, বিচার বিভাগকে নিয়ে আমরা গর্ব করতাম। আওয়ামী লীগ প্লাস নির্বাচিত হন আওয়ামী লীগ প্লাস দ্বারা, তারা জনগণের ভোটে নির্বাচিত হন না। তারা আওয়ামী লীগ প্লাসের জন্য কাজ করেন, জনগণের জন্য তারা কিছুই করেন না। বাংলাদেশে গণতন্ত্র নয় আওয়ামী লীগ প্লাসতন্ত্র চলছে। এর থেকে মুক্তি না পেলে মানুষের মুক্তি সংগ্রাম শেষ হবে না।

আমাদের ঐতিহ্যের মুক্তি আন্দোলন স্বৈরশাসন থেকে মুক্তি পেতে, অভাব থেকে মুক্তি পেতে এবং নির্যাতন ও নিপিড়ন থেকে মুক্তি পেতে। আমরা কি মুক্তি পেয়েছি ? আওয়ামী লীগ প্লাসতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হওয়ায় গণতন্ত্র ধংস হয়ে গেছে। আমাদের মুক্তি এলো কোথায়? আওয়ামী লীগ প্লাসের সদস্য না হলে চাকরি মেলে না, টেন্ডার পাওয়া যায় না। স্বাধীনতার আগে আমরা শ্লোগান দিতাম, সোনা বাংলা শশ্মান কেন? এখন শ্লোগান হচ্ছে সোনার বাংলা মরুভূমি কেন? পানি নেই কে ? বিদ্যুত নেই কেন? খাবার নেই কেন ?

সোমবার ১২ জুন,  দুপুরে টাঙ্গাইলের রাইফেল ক্লাব চত্বরে জেলা জাতীয় পার্টির দ্বি-বাষিক সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের এ কথা বলেন। সম্মেলনে টাঙ্গাইল জেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন অ্যাডভোকেট আবদুস সালাম চাকলাদার এবং সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছেন আলহাজ্জ মুহাম্মদ মোজাম্মেল হক।

প্রধান অতিথির বক্তৃতায় জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের বলেন, জাতিসংঘের একটি প্রতিষ্ঠানের রিপোর্টে বলা হয়েছে বাংলাদেশে মাদকদ্রব্য লেনদেনে অর্থ লেনদেন ও পাচার হয়েছে পাঁচ হাজার কোটি টাকা, যা এশিয়ার মধ্যে প্রথম। এটি সারা বিশ্বের মধ্যে পঞ্চম স্থান। বাংলাদেশ নিন্দনীয় কাজে শ্রেষ্ঠ হচ্ছে, আর আমরা বড় বড় কথা বলছি। আওয়ামী লীগের বাইরেও বাংলাদেশ আছে। সেই বাংদেশের মানুষ আর এই সরকারকে দায়িত্বে দেখতে চায় না। তিনি বলেন, আগামী দিনে বড় ধরনের সংগ্রাম আসতে পারে, সেই সংগ্রামে আমাদের জিততে হবে। আমরা সেই সংগ্রামে জিততে না পারলে বাংলাদেশের মানুষ আজীবনের জন্য ক্রীতদাস হয়ে যাবে।

জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান আরো বলেন, পরশু আমি বলেছিলাম আমাদের অজান্তেই দেশ শ্রীলংকা হয়ে গেছে। কারণ, ঐ সময় শ্রীলংকা মেগা প্রকল্প করে তাদের রিজার্ভ শেষ করে ফেলেছিলো। তারা তেল ও কয়লা কিনতে পারেনি, তাই বিদ্যুত দিতে পারেনি।

বিদ্যুতের অভাবে কলকারখানা বন্ধ হয়ে গিয়েছিলো। উৎপাদন বন্ধ হয়ে মানুষ চাকরিচ্যুত হয়েছিলো। টাকা ছাপিয়ে বাজারে ছেড়ে দেয়ায় হুহু করে পণ্যমূল্য বেড়েছিলো। তখন শ্রীলংকার মানুষ রাস্তায় নেমেছিলো কিন্তু পুলিশ মানুষের আন্দোলন দমন করেনি। আইন শৃংখলা রক্ষায় কাজ করেছিলো সে দেশের পুলিশ। অথচ, শ্রীলংকার সেই সরকার অনেক জনপ্রিয় ছিলো। আমাদেরও কয়লা কেনার টাকা নেই, দেশের মানুষকে বিদ্যুত দিতে পারছে না সরকার। বিদ্যুতের অভাবে কলকারখানা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। কাঁচামালের দাম বাড়ছে, কলকারখানা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। চাকরি হারিয়ে মানুষের আয় কমে যাচ্ছে। দেশের অর্থনীতিতে মন্দা বিরাজ করছে। টাকা ছাপিয়ে বাজারে ছাড়ার কারণে মূদ্রাস্ফীতি সৃষ্টি হয়েছে।

কুলি-মজুর থেকে সকল শ্রেণীর মানুষ এখন কষ্টে দিন কাটাচ্ছে। এখন বাংলাদেশের অবস্থাও তখনকার শ্রীলংকার মতই। সরকার তেল ও কয়লা কিনতে পারছে না তাই বিদ্যুত দিতে পারছে না। বড় বড় মেগা প্রকল্প করে মেগা লুটপাটের মাধ্যমে দেশের টাকা বিদেশে পাচার করা হয়েছে। দেশে অনেক পণ্যের দাম এখন শ্রীলংকার চেয়ে বেশি। যারা আওয়ামী লীগ করে তাদের কাছে দেশের এই বাস্তবতা সঠিক মনে হয় না। কারণ, আওয়ামী লীগ ও সাধারণ মানুষের মাঝে বৈষম্য সৃষ্টি হয়েছে। আওয়ামী লীগ যারা করে তারা কোন অভাবের মধ্যে নেই।

গোলাম মোহাম্মদ কাদের বলেন, শুনেছি কয়েকদিন আগে একটি ক্লাবে কয়েকজন যুবক মদ নিয়ে হাসাহাসি করে বলছে এখানে তিন লাখ টাকার মদ আছে, সারা রাত ভরে খাবো। আবার স্বর্নের দোকানে ৬০ থেকে ৭০ লাখ টাকার স্বর্ণ কেনাকাটা করে কেউ কেউ। আর গুলশান ও বনানীর রেস্তোরায় একেকজন ১০ থেকে ১২ হাজার টাকার খাওয়া দাওয়া করে। এত টাকা কোথা থেকে আসে? কারা এত টাকা খরচ করে? অথচ একজন শ্রমিক সারাদিন খেটে মাত্র তিনশো টাকা আয় করে। সাধারণ মানুষ অর্থের অভাবে দিন চালাতে পারে না। যারা আওয়ামী লীগ করে তারা তো স্বর্গে বসবাস করছেন। তারা মানুষের কষ্ট বোঝে না। অথচ, ওয়াল্ড ব্যাংকের তথ্যে জানা যায় দেশের শতকরা আয়ের ২৮ ভাগ নিয়ে নেয় ৫ ভাগ উচ্চশ্রেণীর মানুষ।

তারা কারা এদেশের মানুষ জানে না? আর সব চেয়ে নিম্ন শ্রেণীর ৫ ভাগ মানুষ পায় শতকরা মাত্র ২৩ পয়সা। ২৩ পয়সাওয়ালা মানুষদের আওয়ামী লীগ চোখে দেখে না। মানুষে মানুষে বৈষম্য সৃষ্টি করে আওয়ামী লীগ বাস্তবতা দেখে না। বৈষম্য থেকে মুক্তি পেতে এদেশের মানুষ হাজার বছর ধরে মুক্তি সংগ্রাম করেছে। এক সময় চাকরি ও ব্যবসা ক্ষেত্রে পশ্চিম পাকিস্তানীরা আমাদের সাথে বৈষম্য সৃষ্টি করেছিলো। আমরা মুক্তির জন্য সংগ্রাম করেছিলাম। স্বাধীনতা যুদ্ধে জয়ী হয়ে আমরা স্বাধীনতা পেয়েছি কিন্তু মুক্তি পাইনি। তাই এখনো বৈষম্যে নিষ্পেষিত হচ্ছে দেশের মানুষ।

এসময় জাতীয় পার্টি মহাসচিব মোঃ মুজিবুল হক চুন্নু এমপি বলেছেন, গেলো ১২ বছরে আওয়ামী লীগ বিদ্যুত উৎপাদন ক্ষেত্রে রেন্টাল ও কুইক রেন্টাল এর নামে ৯০ হাজার কোটি টাকা ভাগাভাগি করেছে। ২০০৯ সালে মাত্র ২১ হাজার কোটি টাকা খেলাপী ঋণ ছিলো এখন খেলাপী ঋণের পরিমাণ ১ লাখ ৩১ হাজার কোটি টাকা। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ নেতাদের মাথা ঠিক নেই তারা আবোলতাবোল বলছেন।

প্রবীন নেতা আমির হোসেন আমু সংলাপের কথা বলেছেন কিন্তু অন্যান্য নেতারা বলেছেন এটি ব্যক্তিগত মতামত। ভিসা নীতি ঘোষণায় অনেকের ঘুম হারাম হয়ে গেছে। যারা নির্বাচন কলুষিত করতে চায় তাদের সামনে মার্কিন ভিসা নীতি হচ্ছে মারাত্মক আতংক।

টাঙ্গাইল জেলা জাতীয় পার্টির দ্বি-বার্ষিক সম্মেলনে জেলা আহ্বায়ক মোঃ আব্দুস সালাম চাকলাদারের সভাপতিত্বে এবং সদস্য সচিব মোঃ মোজাম্মেল হক এর সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন- জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও জাতীয় সংসদের বিরোধীদলীয় উপনেতা জনবন্ধু গোলাম মোহাম্মদ কাদের এমপি, জাতীয় পার্টির মহাসচিব বীর মুক্তিযোদ্ধা মোঃ মুজিবুল হক চুন্নু এমপি, প্রেসিডিয়াম সদস্য মোঃ আবুল কাশেম, এডভোকেট মোঃ রেজাউল ইসলাম ভূঁইয়া, জহিরুল ইসলাম জহির।

জেলা নেতৃবৃন্দের মধ্যে বক্তব্য রাখেন,  সদ্দের আলী মিয়া, মোজাফফর হোসেন,এডভোকেট আবু তাহের, আবুল কাশেম, এম এ হান্নান, আব্দুর রাজ্জাক, তোফাজ্জেল হোসেন খান, মোজাম্মেল হক মজনু, বীরমুক্তিযোদ্ধা মাহমুদুল হাসান মাহমুদ, অধ্যাপক মতিয়ার রহমান, খন্দকার মনোয়ারা বেগম, এডভোকেট সুজাত আলী , সৈয়দ সামসুদ্দোহা, মোস্তাফিজ হোসেন, মোঃ ইব্রাহীম মোল্লা, আহসান খান আসু।

উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের মধ্যে চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা বীর মুক্তিযোদ্ধা মমতাজ উদদীন, দফতর সম্পাদক-২ এম রাজ্জাক খান, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক এলাহান উদ্দিন, যুগ্ম কোষাধ্যক্ষ এডভোকেট আবু তৈয়ব, কেন্দ্রীয় নেতা সোহেল রানা।


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *