!!
প্রায় সাড়ে ১০ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদের তথ্য গোপনের অভিযোগে ফেঁসে গেলেন সড়ক ও জনপথ বিভাগের কুষ্টিয়া সার্কেলের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মো. আবু হেনা মোস্তফা কামাল এবং তার স্ত্রী ও শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের প্যাথলজি বিভাগের প্রভাষক ডা. জোবাঈদা শাহনূর রশীদ, এছাড়া আসামি মো. আবু হেনা মোস্তফা কামাল স্ত্রীকে দানসহ পারিবারিক ও অন্যান্য ব্যয় হিসাব করলে দুদকের অনুসন্ধানে মোট ৭ কোটি ৮৫ লাখ ৯৬ হাজার ৭৬০ টাকার সম্পদের তথ্য পাওয়া যায়। যার মধ্যে গ্রহণযোগ্য আয় ১ কোটি ৫০ লাখ ৯২ হাজার ২৬৭ টাকা বাদ দিলে ৬ কোটি ৩৫ লাখ ৪ হাজার ৪৯৩ টাকার সম্পদের উৎস দেখাতে পারেননি তিনি। যা জ্ঞাত আয়ের সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ণ বলে দুদকের কাছে প্রমাণিত হয় !!
নিজস্ব প্রতিবেদক : নিজেদের অবৈধ সম্পদকে বৈধ করার নানা কৌশল গ্রহণ করেও শেষ রক্ষা হয়নি। স্বামী-স্ত্রী দুজনেই অবৈধ সম্পদ অর্জন, সম্পদের তথ্য গোপন ও মানিলন্ডারিং আইনে দায়ের করা পৃথক দুই মামলার আসামি হয়েছেন।
গতকাল বৃহস্পতিবার ৬ জুলাই, দুদকের পাবনা সমন্বিত জেলা কার্যালয়ে সংস্থাটির উপ-পরিচালক মো. খায়রুল হক বাদী হয়ে মামলা দুইটি দাখিল করেছেন। দুদকের ঊর্ধ্বতন একটি সূত্র বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, আসামি মো. আবু হেনা মোস্তফা কামাল সিরাজগঞ্জ সড়ক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলীর দায়িত্ব পালনকালে তার বিরুদ্ধে ঘুষ ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠে।
বর্তমানে তিনি কুষ্ঠিয়ার সড়ক ও জনপথ বিভাগের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী হিসাবে কাজ করছেন। অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ প্রাথমিক অনুসন্ধানে ধরা পরায় দুদক থেকে ২০২২ সালের ২৩ জুন তার বিরুদ্ধে সম্পদ বিবরণী দাখিলের আদেশ জারি করা হয়।
যার পরিপ্রেক্ষিতে ওই বছরের ১৬ আগস্ট পাবনা সমন্বিত জেলা কার্যালয়ে সম্পদ বিবরণী দাখিল করেন মো. আবু হেনা মোস্তফা কামাল। যেখানে তিনি স্থাবর ও অস্থাবর মিলিয়ে ২ কোটি ২১ লাখ ৯৮ হাজার ৩৯২ টাকার সম্পদের হিসাব দাখিল করেন।
কিন্তু দুদকের অনুসন্ধানে মোট ৩ কোটি ১৩ লাখ ১১ হাজার ৪৭৩ টাকার সম্পদের তথ্য প্রমাণ মেলে। অর্থাৎ এখানে তিনি ৯১ লাখ ১৩ হাজার ৮১ টাকার সম্পদের তথ্য গোপন করেছেন বা মিথ্যা তথ্য দাখিলের অভিযোগ আনা হয়েছে।
এছাড়া আসামি মো. আবু হেনা মোস্তফা কামাল স্ত্রীকে দানসহ পারিবারিক ও অন্যান্য ব্যয় হিসাব করলে দুদকের অনুসন্ধানে মোট ৭ কোটি ৮৫ লাখ ৯৬ হাজার ৭৬০ টাকার সম্পদের তথ্য পাওয়া যায়। যার মধ্যে গ্রহণযোগ্য আয় ১ কোটি ৫০ লাখ ৯২ হাজার ২৬৭ টাকা বাদ দিলে ৬ কোটি ৩৫ লাখ ৪ হাজার ৪৯৩ টাকার সম্পদের উৎস দেখাতে পারেননি তিনি। যা জ্ঞাত আয়ের সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ণ বলে দুদকের কাছে প্রমাণিত হয়।
একইসঙ্গে অবৈধ ওই সম্পদের মধ্যে আসামি মো. আবু হেনা মোস্তফা কামাল তার মায়ের দানকৃত ৬ কোটি ২০ লাখ টাকা তার আয়কর নথির ২০০১-২০০২ করবর্ষ হতে ২০০৬-২০০৭ করবর্ষ পর্যন্ত প্রদর্শন করেছেন। এ টাকা থেকে তিনি তার স্ত্রী ডা. জোবাঈদা শাহনূর রশীদকে বিভিন্ন সময়ে ২ কোটি ৭০ লাখ টাকা দান করেছেন। যা তাদের উভয়ের আয়কর নথিতে এ দান গ্রহণ ও প্রদানের বিষয়টি প্রদর্শিত রয়েছে।
অনুসন্ধান বা যাচাইকালে সংশ্লিষ্ট রেকর্ডপত্র পর্যালোচনায় দেখা যায়, আসামি মো. আবু হেনা মোস্তফা কামাল তার ঘুষ ও দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জিত আয়কে স্থানান্তর,হস্তান্তর ও রূপান্তরের মাধ্যমে বৈধতা দানের জন্য অসৎ উদ্দেশ্যে প্রথমে তার মায়ের আয়কর নথিতে প্রদর্শন করেন এবং পরবর্তীতে তা দান হিসেবে নিজের আয়কর নথিতে প্রদর্শন করেছেন। পরবর্তীতে দানকৃত এ টাকার মধ্য থেকে তার স্ত্রী ডা. জোবাঈদা শাহনূর রশীদকে দান করেন এবং স্ত্রীর নামে সম্পদ অর্জন করেন। যা মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইনের ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
অন্যদিকে দ্বিতীয় মামলায় তার স্ত্রী ও শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের প্যাথলজি বিভাগের প্রভাষক ডা. জোবাইদা শাহনূর রশীদ দুদকে দাখিলকৃত তার সম্পদ বিবরণীতে স্থাবর ও অস্থাবর মিলিয়ে মোট ২ কোটি ৪০ লাখ ১৭ হাজার ৭৩১ টাকার পরিসম্পদের তথ্য দাখিল করেন। অনুসন্ধান বা যাচাইকালে তার নামে মোট ২ কোটি ৪৪ লাখ ৬২ হাজার ৩১ টাকার স্থাবর সম্পদের তথ্য পাওয়া যায়। অর্থ্যাৎ তিনি ৪ লাখ ৪৪ হাজার ৩০০ টাকা মূল্যের সম্পদের তথ্য গোপন করেছেন।
অনুসন্ধানকালে আরও দেখা যায়, আসামি ডা. জোবাঈদা শাহনূর রশীদের নীট সম্পদ, পারিবারিক ও অন্যান্য ব্যয়সহ ৪ কোটি ২৬ লাখ ১০ হাজার ৫০৯ টাকার সম্পদের তথ্য পাওয়া যায়। যার মধ্যে তার গ্রহণযোগ্য আয় ১ কোটি ৫২ লাখ ১২ হাজার ৫৭ টাকা বাদ দিলে ২ কোটি ৭৩ লাখ ৯৮ হাজার ৪৫২ টাকার জ্ঞাত আয়ের সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ণ সম্পদ অর্জনের প্রমাণ পাওয়া গেছে।
যার মধ্যে ২ কোটি ৭০ লাখ টাকা তার স্বামী আবু হেনা মোস্তফা কামাল থেকে দান সূত্রে প্রাপ্ত। তাদের উভয়ের আয়কর নথিতে উক্ত দান গ্রহণ ও প্রদানের বিষয়টি প্রদর্শিত রয়েছে। যার মাধ্যমে দুদকের কাছে প্রমাণিত হয়েছে ঘুষ ও দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জিত অবৈধ আয়কে স্থানান্তর,হস্তান্তর ও রূপান্তরের মাধ্যমে বৈধতা দানের চেষ্টা করেছেন। যেখানে স্ত্রী হিসেবে তিনি তার স্বামীকে প্রত্যক্ষ সহযোগিতা করেছেন। যে কারণে এই মামলায় ডা. জোবাঈদা শাহনূর রশীদকে প্রথম আসামি ও স্বামী মো. আবু হেনা মোস্তফা কামালকে দ্বিতীয় আসামি করা হয়েছে।
উভয় মামলায় আসামিদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন আইন ২০০৪ এর ২৬(২) ও ২৭(১) ধারা এবং মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২ এর ৪(২) ও ৪(৩) ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছে বলে দুদক সুত্রে জানা গেছে ।