মিল্টন চন্দ্র রায় : সরকারি দাপ্তরিক কাজ শেষে ধলাহার ইউনিয়ন থেকে ফেরার পথে রাস্তা সংলগ্ন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী’র উপহার “দুর্যোগ সহনশীল ঘর” প্রকল্পের আওতায় নবনির্মিত বাড়িটি চোখে পড়লো। দেখলাম একজন শীর্ণ দেহ ব্যক্তি খালি গায়ে বাড়িটির বাইরের বারান্দায় বসে আছে। ড্রাইভারকে বললাম গাড়ি থামান। সাথে থাকা অপর কর্মচারীকে বললাম ছাতাটা ধরো (তখন বাইরে বৃষ্টি পড়ছিল)। গাড়ি থেকে নেমে লোকটির নিকটস্থ হলাম। আমাকে দেখে লোকটি ইতস্তত বোধ করছিলেন। কাছে গিয়ে লোকটিকে বললাম এই বাড়িটি কি আপনার? লোকটি উত্তর করলেন, হ্যা স্যার, আমার। বললাম বাড়িটি কি আপনি বানিয়েছেন? লোকটি বললেন, না; সরকারিভাবে টিনো (ইউএনও) অফিস থেকে করে দিয়েছে (উল্লেখ্য, লোকটি তখন পর্যন্ত আমার পরিচয় ঠাহর করতে পারেন নি; যদিও বাড়িটি নির্বাচন করার সময় আমি সরেজমিন পরিদর্শন করেছিলাম)। লোকটি বলতে থাকলেন…………………”আগে একটি জীর্ণ কুড়ে ঘরে থাকতাম; ঝড় বাদল আসলে ছোট্ট মেয়ে আর পরিবারকে নিয়ে খুবই কষ্ট করতে হত; রাতে বৃষ্টি আসলে সারারাত ঘুম হতো না; স্ত্রী মেয়েসহ অপেক্ষা করতে হতো কখন বৃষ্টি ছাড়বে; অনেক দিন পর সরকারের সহযোগিতায় স্থায়ী মাথা গোজার ঠাই হওয়ায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অনেক ধন্যবাদ”। লোকটির কথা শুনতে শুনতে ফিরে গিয়েছিলাম শৈশবে। ভাবছিলাম আমার গ্রামের অসহায় মানুষগুলোর কথা যাদেরকেও বর্ষা বাদলের দিনে নির্ঘুম রাত কাটাতে হতো কলা পাতার ছাতা মাথার উপরে ধরে! বৃষ্টি থামলে পরের দিন সকালে দেখতাম অসহায়ত্বের চাঁপা কান্নামিশ্রিত পাথরসম দুঃখ নিয়ে বৃষ্টির পানিতে ধ্বসে পড়া মাটির দেয়াল সড়ানোর কি দুঃসহ চেষ্টা! আর ভাবতাম এই অসহায় মানুষগুলোর দুর্দশা কেউ যদি লাঘব করার ব্যবস্থা করতো! অসংখ্য ধন্যবাদ মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে এ রকম অসংখ্য অসহায় মানুষের মুখে হাসি ফোটানোর জন্য। যারা কোন দিন চিন্তাও করেননি তাদের জীর্ণ কুটির একদিন বিনা খরচে পাঁকা বাড়ি হয়ে যাবে। সেই সাথে নিজেকে সৌভাগ্যবান মনে করি এই রকম একটি মহৎ কাজে আমার ক্ষুদ্র অবদান রাখতে পেরে। কৃতজ্ঞতা জানাই, প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা ও চেয়ারম্যান, ধলাহার ইউনিয়ন পরিষদকে উপকারভোগী নির্বাচন থেকে শুরু করে বাড়ি নির্মান কাজে সার্বিক সহযোগিতা করার জন্য। ধন্যবাদ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী।
লেখক : উপজেলা নির্বাহী অফিসার, জয়পুরহাট সদর, জয়পুরহাট।