মো: মোজাম্মেল হক : ইংল্যান্ডের এই সংকর জাতটির হাঁসের রং খাকি বলে এর নাম খাকি ক্যাম্পবেল। ক্যাম্পবেল নামক এক মহিলা ১৯০১ সালে ইংল্যান্ডের বিভিন্ন জাতের হাঁসের মধ্যে সংকরায়ন ঘটিয়ে এ জাত সৃষ্টি করেন। পুকুর ডোবা বা জলাশয় না থাকলেও সম্পূর্ণ আবদ্ধ অবস্থায় খাকি ক্যাম্পবেল হাঁস পালন করা সম্ভব।
বেশি ডিমের জন্য খাকি ক্যাম্পবেল হাঁস পালন করা যেতে পারে। প্রাণী বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ঠিকমতো পরিচর্যা করতে পারলে এই হাঁস বছরে ৩০০টি ডিম দিতে সক্ষম। এই হাঁস পালনে খাবার থেকে বাসস্থানের দিকে বিশেষ যত্ন নিতে হবে। লাভজনক ব্যবসা হিসেবে খাকি ক্যাম্পবেল হাঁস পালন যথেষ্ঠ সম্ভাবনাময়। এই হাঁস পালনের জন্য বড় জলাশয়ের প্রয়োজন হয় না। শুধুমাত্র হাঁসের স্নানের জন্য কৃত্রিম জলাশয় কিংবা চৌবাচ্চা তৈরি করে বৈজ্ঞানিক প্রথায় এদের পালন করা সম্ভব। খাকি ক্যাম্পবেল সংকরায়ণ পদ্ধতিতে উৎপন্ন একটি উন্নত প্রজাতির হাঁস। এই হাঁসের রোগব্যাধিও কম হয়। খাকি ক্যাম্পবেল হাঁস থাকার জন্য বাসস্থান একটু উঁচু জায়গায় করতে হবে। হাঁসের ঘরের মেঝে যেন কখনও স্যাঁতসেতে না থাকে। ঘরটিতে যেন আলো-বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা থাকে। খাকি ক্যাম্পবেল হাঁস সম্পূর্ণ ছেড়ে কিংবা আংশিক ছেড়ে বা সম্পূর্ণ আবদ্ধ অবস্থায় পালন করা যেতে পারে। নওগাঁ হাঁস খামারের ম্যানেজার জানিয়েছেন, গরমকালে খাকি ক্যাম্পবেলের বিশেষ পরিচর্যা প্রয়োজন। বেশিক্ষণ যেন খাবার খোলা অবস্থায় পড়ে না থাকে। হাঁস যেহেতু ভেজা খাবার খায়, ফলে ভেজা খাবারের উপর যদি রোদ পড়ে তা হলে সেই খাবার দ্রুত খারাপ হয়ে যেতে পারে এবং খাবারের মধ্যে টক্সিন তৈরি হয়ে যায়। সেজন্য এইসময় একবারে বেশি খাবার না দিয়ে হাঁসকে বারেবারে অল্প পরিমাণে খাবার দিতে পারলে ভালো।
খাবারের পাত্রের কাছেই জলের ব্যবস্থা রাখতে হবে। জল যেন ঠান্ডা থাকে। বারেবারে জল পাল্টে দিতে পারলে ভালো হয়। এই সময় হঠাৎ করে ঝড়-বৃষ্টি হতে পারে। হাঁসের খাবার যেন বৃষ্টিতে না ভেজে। তা হলে খাবারে থাকা লবণাক্তভাব নষ্ট হয়ে যায়। ফলে খাবার স্বাদহীন হয়ে পড়ে। ওই খাবার হাঁস খেতে চায় না। দিনেরবেলায় হাঁস রান এরিয়া অর্থাৎ আকাশের নিচে রাখতে হয়। কিন্তু রোদ গায়ে লাগলে হাঁসের কষ্ট হতে পারে। সেজন্য শেডের ব্যবস্থাও রাখতে হবে। হাঁস যখন চাইবে, তখন খোলা জায়গায় থাকবে। যখন মনে করবে শেডের নিচে চলে আসবে।
বর্ষায় খাকি ক্যাম্পবেল হাঁস যেন কোনওভাবেই না ভেজে। হাঁসের খাবার খোলা জায়গায় বেশিক্ষণ রাখা চলবে না। হাঁসের খাওয়ার জল শোধন করে দিতে হবে। হাঁসের থাকার ঘর সবসময় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। নিয়মিত হাঁসকে প্রতিষেধক দেওয়া উচিত। হাঁসের বাচ্চার থাকার জন্য পর্যাপ্ত জায়গা দিতে হবে। বয়স ভেদে সুষম খাবার দেওয়া দরকার। হাঁসের ঘরে লিটারের উপর ৯:১ অনুপাতে চুন ও ব্লিচিং ছড়াতে হবে। এতে লিটার ঝুরঝুরে এবং দুর্গন্ধমুক্ত থাকবে।
এক সপ্তাহ বয়সের একটি হাঁসের বাচ্চাকে ১৫ গ্রাম অনুপাতে খাবার দেওয়া দরকার। ২ সপ্তাহের হাঁসের বাচ্চার ক্ষেত্রে খাবারের পরিমাণ হবে ২৫ গ্রাম। ৩ সপ্তাহের ক্ষেত্রে খাবারের পরিমাণ ৪০ গ্রাম। ৪ সপ্তাহের ক্ষেত্রে খাবার লাগবে ৫০ গ্রাম। ৫ মাসের পর থেকে সপ্তাহে ১৪০ গ্রাম খাবার দেওয়া উচিত। যাঁরা বাজার থেকে কেনা খাবার খাওয়ান, তাঁদের খেয়াল রাখতে হবে, খাকি ক্যাম্পবেল বাচ্চার ১দিন থেকে ২ মাস বয়স পর্যন্ত ডাক স্টার্টার, ২ মাস থেকে ৫মাস পর্যন্ত ডাক গ্রোয়ার ও ৫ মাসের পর থেকে লেয়ার খাবার দিতে হবে। খাকি ক্যাম্পবেল সাড়ে ৪ মাসের পর থেকে ডিম দেওয়ার অবস্থায় চলে আসে। হাঁসের ঘরে রাতে আলো জ্বেলে রাখতে হবে। দেড় মাস থেকে ২ মাস পর্যন্ত হাঁসকে জলে নামতে দেওয়া যাবে না। ডাঙায় পালন করতে হবে।
হাঁসের ঘরের তাপমাত্রা ৩০-৩২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা থাকা উচিত। একটি হাঁসের জন্য রাতে আড়াই বর্গ ফুট জায়গা দরকার। হাঁসকে সবসময় টাটকা খাবার দিতে হবে।
সাধারণভাবে খাকি ক্যাম্পবেল হাঁসের রোগব্যাধি কম। তবুও কিছু রোগ হয়ে থাকে। সেক্ষেত্রে আগাম প্রতিষেধক দিতে হবে। তা হলে সমস্যা অনেকটাই এড়ানো সম্ভব। খাকি ক্যাম্পবেলের প্লেগ রোগ হয়ে থাকে। এই রোগ হলে হাঁস ঝিমোয়। চোখ বন্ধ হয়ে যায়। নাক-মুখ দিয়ে জল বেরতে থাকে। সবুজাভ-সাদা পাতলা মলত্যাগ করে। তিন-চারদিনেই হাঁস মারা যায়। প্রতিষেধক হিসেবে প্রথমে ২ সপ্তাহে, পরে ১০ সপ্তাহে, শেষে ২৪ সপ্তাহে টিকা দিতে হবে। তার পর বছরে একবার করে টিকা দেওয়া দরকার।
(তথ্যসুত্রঃ নওগাঁ হাঁস খামার) (লেখক : খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশ কেএমপি’র পুলিশ কমিশনার)