নিজস্ব প্রতিনিধি : গতকাল সোমবার ১৬ অক্টোবর, দুপুরে হাসপাতালের অপারেশন থিয়েটারটিরে এক প্রসূতির অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে (ওটি) চালু করা হয়। (ওটি) চালুর উদ্বোধনের দিনেই সিজারিয়ান অপারেশন করা হয় বৈবাহিক জীবনের ৩ বছরের মাথায় সর্বপ্রথম মা হতে যাওয়া প্রসূতি মোছাঃ তানজিলা খাতুনের (২২) । এদিন সফলভাবে অপারেশনের মাধ্যমে কন্যা সন্তানের মা হয়েছেন তানজিলা খাতুন । সেই সাথে কন্যা শিশুর জন্মের মধ্য দিয়ে যাত্রা শুরু হয়েছে ওটির।
তানজিলা খাতুন উপজেলার সাতবাড়ীয়া ইউনিয়নের কাকিয়ান গ্রামের মো.কেসমত আলী মন্ডলের কন্যা এবং তার স্বামীর বাড়ি রাজবাড়ী জেলার পাংশা থানার হাবসপুর ইউনিয়নের কাচারীপাড়া গ্রামে।
নবজাতক ও তার মা উভয়েই সুস্থ আছেন, ওটি শেষে প্রসূতিসহ নবজাতককে হাসপাতালের কেবিনে রাখা হয়েছে। ৩-৪দিন নিবিড় পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে এখানেই প্রসূতি এবং নবজাতককে সেবা দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. সানজিদা মুজিব। গর্ভবতী প্রসূতির সিজারের দায়িত্বে ছিলেন হাসপাতালের জুনিয়র কনসালটেন্ট(গাইনি অ্যান্ড অবস) ডা. মরিয়ম জামিলা।
এ সময় হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা.সেলিম মোরশেদ,জুনিয়র কনসালটেন্ট(শিশু) ডা.গালিবা তাসনিম, জুনিয়র কনসালটেন্ট (অর্থোপেডিক) ডা.সেলিম রেজা, মেডিকেল অফিসার ডা.নাসরিন আক্তার, মেডিকেল অফিসার ডা. ওয়াসিম খান, উপসহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার সাবিনা ইয়াসমিন,মিডওয়াইফ মরিয়ম, এসএস এন আশরাফুন্নাহার, ওটি ইনচার্জ তৌফিকা রোজী, ওয়ার্ড ইনচার্জ শিউলি খাতুন ও সুপারভাইজার আইরিন পারভিন। এছাড়া ওটি সফলভাবে সম্পন্ন করতে হাসপাতালের সকল চিকিৎসক,নার্স,কর্মকর্তা ও কর্মচারী সার্বিক সহযোগিতা করেন।
হাসপাতালে জন্ম নেওয়া কন্যা নবজাতকের বাবা রাজু শেখ বলেন, হাসপাতালে প্রথম সিজার হয়েছে, এ জন্য প্রথমে কিছুটা ভয়ে ছিলাম। কিন্তু সুষ্ঠভাবে সিজার সম্পন্ন হওয়ার পর খুবই আনন্দিত হয়েছি। আমাদের মতো গরিব মানুষের জন্য এটা অনেক বড় প্রাপ্তি। জানাযায়,সোমবার থেকে শুরু হওয়া এ অস্ত্রোপচারকার্যক্রম আপাতত হবে প্রতি সপ্তাহে ২দিন। প্রয়োজনীয় সরঞ্জামাদি ও লোকবলের অভাবে দীর্ঘকাল ধরে এ সরকারি হাসপাতালের সিজারসহ সব ধরনের অস্ত্রোপচার বন্ধ ছিলো। বর্তমানে দায়িত্বে থাকা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. সানজিদা মুজিবের উদ্যোগে ৪৫ বছর পর অপারেশন থিয়েটারটি চালু হয়েছে। তাই এখন থেকে নাম মাত্র সরকারি স্বল্প খরচে সিজার অপারেশন সেবা নিতে পারবেন রোগীরা।
হাসপাতালটির জুনিয়র কনসালটেন্ট(গাইনি অ্যান্ড অবস) ডা. মরিয়ম জামিলা বলেন, ৪৫ বছর পর সোমবার সর্বপ্রথম চালু হওয়া ওটিতে প্রথম যার সফলভাবে সিজার করেছি তিনি প্রথম মাতৃত্বের স্বাদ নিতে পেরেছেন। এটাই আমাদের কাছে ভীষণ আনন্দের। আমাদের সামর্থ্য অনুযায়ী রোগীদের সার্বক্ষণিক সেবা দিতে সবার কাছে দোয়া চাইছি।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. সানজিদা মুজিব বলেন, ১৯৭৭ সালে সুজানগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি প্রতিষ্ঠার পর সর্বপ্রথম আমরা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ওটি চালু করতে পেরেছি। এটি সুজানগরবাসীর জন্য আনন্দের খবর। এখন থেকে সপ্তাহে দুইদিন সিজার অপারেশন চালু থাকবে। আমি আন্তরিকভাবে ধন্যবাদ জানাই হাসপাতালের সবাইকে। সবার সহযোগিতা পেলে আমাদের এ কার্যক্রম ভবিষ্যতেও চালু রাখতে পারবো বলেও জানান উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ।
এদিকে দীর্ঘ ৪৫ বছর পর এ চিকিৎসা ব্যবস্থা চালু হওয়ায় আনন্দিত স্থানীয়রা। স্থানীয়রা জানান, কোন প্রসূতি মায়ের অবস্থার অবনতি হলে বা সিজারের প্রয়োজন হলে আগে তাদের পাবনা জেলা শহরে যাওয়া ছাড়া বিকল্প কোন উপায় ছিলনা। বর্তমানে আমাদের হাতের নাগালে এ ব্যবস্থা চালু করায় কোন প্রকার ঝামেলা ছাড়াই সিজারিয়ান সেবা পাওয়া যাবে। এ ব্যবস্থা আরও বেগবান করতে ও মানুষের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে সিজার সেবায় সুযোগ-সুবিধা বাড়াতে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেন তারা।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানাযায়,১৯৭৭ সালে ৩১ শয্যা বিশিষ্ট সুজানগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ভবনটির উদ্বোধন হয় এবং ২০০২ সালে ৫১ শয্যায় উন্নীত করা হয়। বিভিন্ন জটিলতয় দীর্ঘ সময় পেরিয়ে গেলেও এতদিনে ওটি চালু হয়নি। পরিশেষে সকল প্রতিবন্ধকতার অবসান ঘটিয়ে সুজানগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চালু হয়েছে অপারেশন থিয়েটার(ওটি)।