নিজস্ব প্রতিবেদক : আসন্ন পবিত্র মাহে রমজান উপলক্ষ্যে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্য সহনীয় পর্যায়ে রাখার লক্ষ্যে জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের উদ্যোগে ব্যবসায়ীদের অংশগ্রহণে মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে, এ খবর সংশ্লিষ্ট সুত্রের।
জানা গেছে, গতকাল বৃহস্পতিবার ২২ ফেব্রুয়ারি দুপুর ১ টায় ঢাকাস্থ মৌলভীবাজার ব্যবসায়ী সমিতির সভাকক্ষে আসন্ন পবিত্র মাহে রমজান উপলক্ষ্যে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্য সহনীয় পর্যায়ে রাখার লক্ষ্যে জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের উদ্যোগে ব্যবসায়ীদের অংশগ্রহণে মতবিনিময় সভা আয়োজন করা হয়।
উক্ত মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ সরকারের বানিজ্য মন্ত্রনালয়ের প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটু, এমপি। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সংসদ সদস্য জনাব মোহাম্মদ সোলায়মান সেলিম, এমপি এবং মৌলভীবাজার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মোঃ বশির উদ্দিন। সভায় সভাপতিত্ব করেন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) এ. এইচ. এম. সফিকুজ্জামান।
সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন ঢাকা মেট্রো পলিটন পুলিশের লালবাগ জোনের ডিসি মাহবুব-উজ-জামান, ডিজিএফআই এর প্রতিনিধি, বাংলাদেশ ট্রেড এন্ড ট্যারিফ কমিশনের উপপ্রধান মোঃ মাহমুদুল হাসান, এফবিসিসিআইয়ের পরিচালক ও বাংলাদেশ পাইকারি চিনি ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি হাজী মোঃ আবুল হাশেম, ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের ৩১ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর শেখ মোহাম্মদ আলমগীর, এফবিসিসিআইয়ের পরিচালক আবু মোতালেব, মৌলভীবাজার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মোঃ বশির উদ্দিন ও সাধারণ সম্পাদক হাজী মোঃ গোলাম মওলা, এফবিসিসিআইয়ের পরিচালক হাফেজ হাজি মোঃ হারুন এবং সিনিয়র সহ সভাপতি আলহাজ্ব ফারুক আহমেদ, এফবিসিসিআইয়ের পরিচালক ও বাংলাদেশ ফ্রেশ ফ্রুটস ইম্পোর্টাস এসোসিয়েশনের সভাপতি সিরাজুল ইসলাম, বিভিন্ন ব্যবসায়ী সমিতির সদস্যবৃন্দ এবং প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকবৃন্দ।
স্বাগত বক্তব্য জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক সভার প্রধান অতিথি ও বিশেষ অতিথিসহ সভায় উপস্থিত সকলকে অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানান। তিনি সভায় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণে অধিদপ্তর কর্তৃক গৃহীত বিভিন্ন কার্যক্রম সম্পর্কে সকলকে অবগত করেন। মহাপরিচালক বলেন, আমরা প্রতিনিয়ত ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণে কাজ করে যাচ্ছি কিন্তু এই ক্ষেত্রে সফল হতে হলে প্রয়োজন ভোক্তাদের সচেতনতা ও সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টা। এই সচেতনতার অংশ হিসেবে আয়োজন করা হয়েছে এই মতবিনিময় সভা। তিনি মতবিনিময় সভার প্রেক্ষাপট বর্ণনা করতে গিয়ে তিনি বলেন, রমজান মাসে তেল, চিনি, ছোলা, খেজুরসহ কতিপয় পণ্যের চাহিদা বেড়ে যায়। সে প্রেক্ষিতে এ সকল পণ্যের মজুদ ও সরবরাহ ঠিক রাখা চ্যালেঞ্জের বিষয়। বর্তমান সরকারের নির্বাচনী ইশতেহারের ১১ টি প্রতিশ্রুতির মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ করা। তিনি সরকারের উচ্চ পর্যায় থেকে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের বিষয়ে সভায় অবহিত করেন।
তিনি আরও বলেন, পণ্যের সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে পারলে বাজারে পণ্যের যৌক্তিক মূল্য নিশ্চিত করা সম্ভব হবে। এ ক্ষেত্রে তিনি মৌলভীবাজার ব্যবসায়ী সমিতির ব্যবসায়ীগণ পূর্বের ন্যায় এই রমজানেও নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য স্থিতিশীল ও সরবরাহ রাখতে অধিদপ্তরকে সার্বিক সহযোগিতা প্রদান করবেন মর্মে আশাবাদ ব্যক্ত করে তাঁর বক্তব্য শেষ করেন।
মৌলভীবাজার ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক হাজী মোঃ গোলাম মওলা বলেন, রমজান মাস আমাদের অতি সন্নিকটে। সরকারে সব সংস্থা দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে। তিনি অধিদপ্তরের সার্বিক কার্যক্রমের প্রশংসা করে বলেন, অধিদপ্তর সৎ ব্যবসায়ীদের সুরক্ষা প্রদান করে এবং অসাধু ব্যবসায়ীদের আইন অনুযায়ী শাস্তি প্রদান করে। এছাড়াও বর্তমানে দেশে পর্যাপ্ত পরিমাণ নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য মজুদ রয়েছে বলে তিনি সভায় অবহিত করেন এবং এ ক্ষেত্রে তিনি অধিদপ্তরের সার্বিক কাজে সহযোগিতা করার আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
সভায় এফবিসিসিআইয়ের পরিচালক আবু মোতালেব সভায় উপস্থিত সকলকে আন্তরিক শুভেচ্ছা জানান। তিনি ভোক্তা অধিদপ্তরের ন্যায় সরকারের অন্যান্য সংস্থাকে মনিটরিং জোরদার করার আহবান জানান।
আলোচনায় এফবিসিসিআই এর পরিচালক বাংলাদেশ ফ্রেশ ফ্রুটস ইম্পোর্টাস এসোসিয়েশনের সভাপতি সিরাজুল ইসলাম মতবিনিময় সভা আয়োজনের জন্য অধিদপ্তরের সংশ্লিষ্ট সকলকে ধন্যবাদ জানান। তিনি ব্যবসায়ীদের খেজুর আমদানির ক্ষেত্রে যে সকল সমস্যার সম্মুখীন হতে হয় তা সভায় তুলে ধরেন এবং এ সকল সমস্যা সমাধানে সংশ্লিষ্ট সকলের সহযোগিতা কামনা করেন। তিনি কাস্টমস কর্তৃক আমদানিকৃত পণ্যের ক্ষেত্রে ঋণপত্র অনুযায়ী এসেসমেন্ট করার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য অনুরোধ জানান। এছাড়াও তিনি আসন্ন পবিত্র রমজান মাসে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখতে অধিদপ্তরকে সার্বিকভাবে সহযোগিতা করার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেন।
সভায় এফবিসিসিআইয়ের পরিচালক ও বাংলাদেশ পাইকারি চিনি ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি হাজী মোঃ আবুল হাশেম বলেন, মিল হতে সাপলাই ঠিক থাকলে পণ্যে সরবরা স্বাভাবিক রাখা যাবে। তিনি মূল্য নিধারণ ও ক্রয়/বিক্রয় ভাউচার সংরক্ষণ নিশ্চিত করার মাধ্যমে চিনির যৌক্তিক মূল্য নিশ্চিত করা সম্ভব হবে বলে মনে করেন।
আলোচনায় ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের ৩১ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর শেখ মোহাম্মদ আলমগীর নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য স্থিতিশীল ও সরবরাহ রাখতে আন্তঃমন্ত্রণালয় কমিটি গঠন করার অনুরোধ জানান।
সভায় ঢাকা মেট্রো পলিটন পুলিশের লালবাগ জোনের ডিসি মাহবুব-উজ-জামান বলেন, দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে ব্যবসায়ীদের অবদান অনস্বীকার্য। তিনি ব্যবসায়ীদের নৈতিকতা ও ধর্মীয় সহানুভূতি বজায় রেখে সৎভাবে ব্যবসা করার অনুরোধ জানান।
আলোচনায় মৌলভীবাজার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মোঃ বশির উদ্দিন অধিদপ্তর কর্তৃক পরিচালিত অভিযানে সমিতির প্রতিনিধির অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার জন্য অনুরোধ জানান। এ ক্ষেত্রে তিনি সমিতির পক্ষ থেকে সার্বিক সহযোগিতা করা হবে মর্মে জানান।
সভায় সংসদ সদস্য মোহাম্মদ সোলায়মান সেলিম, এমপি অধিদপ্তর কর্তৃক মতবিনিয় সভা আয়োজনের জন্য সংশ্লিষ্ট সকলকে ধন্যবাদ জানান। তিনি বলেন, সারাদেশের ব্যবসার প্রাণ কেন্দ্র মৌলভীবাজার করোনা মহামারীতেও এখান কার ব্যবসায়ীগণ পণ্যে সরবরাহ স্বাভাবিক রেখেছিলেন এবং সাধারণ মানুষকে সহযোগিতা করেছিলেন। তিনি দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে অধিদপ্তরের সার্বিক কার্যক্রমের প্রশংসা করেন। তিনি দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় কর্তৃক গৃহীত বিভিন্ন কার্যক্রমে ব্যবসায়ীদের সহযোগিতা কামনা করেন। এছাড়াও রমজান মাসের পূর্বেই যথেষ্ট সময় নিয়ে এরূপ প্রস্তুতিমূলক সভা আয়োজনের অনুরোধ জানান।
মতবিনিময় সভায় বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটু, এমপি তাঁর বক্তব্যে শুরুতেই ভাষা শহীদ ও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ তাঁর পরিবারের শহীদ সকল সদস্যদের প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেন। তিনি শত বছরের ঐতিহ্য এই মৌলভীবাজারে ব্যবসায়ীদের অংশগ্রহণে মতবিনিময় সভা আয়োজনের জন্য সংশ্লিষ্ট সকলকে ধন্যবাদ জানান। তিনি বলেন, পণ্যে সরবরাহ নিরবিচ্ছিন্ন রাখাই আমাদের লক্ষ্য। কেননা পণ্যে সরবরাহ নিশ্চিত করা গেলে এর যৌক্তিক মূল্য বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে।
তিনি বলেন, বর্তমান সরকার গঠনের পর গত ১২ জানুয়ারি, অনির্ধারিত বৈঠকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মানুষের কষ্ট লাঘব করতে দ্রব্যমূল্য যৌক্তিক পর্যায়ে রাখার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের নির্দেশনা প্রদান করেন। তিনি ধর্মীয় অনুভূতি বিবেচনায় রমজানের নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যসমূহের মধ্যে অন্যতম একটি পণ্য বস্তার খেজুরের মূল্য যৌক্তিক পর্যায়ে রাখার জন্য ব্যবসায়ীদের অনুরোধ জানান। এছাড়াও তিনি রমজান মাস কেন্দ্রীক আমদানিকৃত নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য খালাসের ক্ষেত্রে সমস্যার সম্মুখিন হলে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে অবহিত করার কথা বলেন।
এ ক্ষেত্রে তিনি প্রয়োজনীয় তড়িৎ ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস প্রদান করেন। তিনি বলেন, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়সহ বিভিন্ন সংস্থা ব্যবসায়ীদের সহযোগিতা প্রদান করবে এবং ব্যবসায়ীগণ রমজান মাসে নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের সরবরাহ স্বাভাবিক রাখার ক্ষেত্রে আমাদের আশ্বস্ত করবেন। তিনি আরও বলেন, সরকার উদ্যোগ নিয়ে টিসিবির মাধ্যমে ১ কোটি পরিবারকে স্মার্ট কার্ডের মাধ্যমে ভর্তুকি মূল্যে চাল, ডাল, চিনি, খেজুর, তেল ও ছোলা বিতরণ করে আসছে। এর ফলে পণ্যের চাহিদা কিছুটা কমে আসবে। পরিশেষে তিনি সকলের সহযোগিতায় আসন্ন রমজানে নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য স্থিতিশীল ও সরবরাহ স্বাভাবিক থাকবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করে তাঁর বক্তব্য শেষ করেন। মুক্ত আলোচনায় বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী অংশগ্রহণকারীবৃন্দের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর প্রদান করেন।
আলোচনার শেষ পর্যায়ে অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আসন্ন পবিত্র রমজান মাসে ভোক্তা সাধারণকে প্রয়োজনের তুলনায় অতিরিক্ত পণ্য ক্রয় করে বাজারে পণ্য সরবরাহ ব্যবস্থায় বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি না করার অনুরোধ জানান। তিনি বলেন, আজকের এই সভার একটি কার্যবিবরণী প্রস্তুত করে সভা হতে প্রাপ্ত মতামতসমূহের আলোকে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় বরাবর সুপারিশ তুলে ধরা হবে। সেখানে সংশ্লিষ্ট অন্যান্য মন্ত্রণালয়কে প্রয়োজন স্বাপেক্ষে সম্পৃক্ত করা হবে। তিনি আরও বলেন, আমরা ব্যবসায়ীদের নিয়েই কাজ করতে চাই। তিনি মাননীয় বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রীর নেতৃত্বে সকলের সম্মলিত কার্যক্রম গ্রহণের ফলে স্মার্ট বাজার ব্যবস্থাপনা সৃষ্টির মাধ্যমে নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য স্থিতিশীল ও সরবরাহ রাখাসহ এ সেক্টরে শৃঙ্খলা আসবে মর্মে আশাবাদ ব্যক্ত করে এবং উপস্থিত সকলকে ধন্যবাদ জানিয়ে সভার সমাপ্তি ঘোষণা করেন।
উল্লেখ্য, সভা শেষে বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রীর নেতৃত্বে মৌলভীবাজারে বাজার তদারকি কার্যক্রম পরিচালিত হয়।