স্কোয়াড্রন লীডার (অবঃ)সাদরুল আহমেদ খান, সদস্য অর্থ ও পরিকল্পনা বিষয়ক উপকমিটি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ।
বিশেষ সম্পাদকীয় : বিএনপি এবং লবিস্ট গ্রুপ গত ৪ জানুয়ারী বাংলাদেশের উপর স্যাংশন আনার অপচেস্টা এবং ৭ জানুয়ারীর বাংলাদেশের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন বাঞ্জাল করতে ব্যার্থ হয়ে জন বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় এবং নীজ দলের নেতা-কর্মীদের সাথে দন্দে লিপ্ত হয়।
এই অচলাবস্থা ভিন্ন খাতে প্রভাহিত করতে আর বাজার অস্থিতিশীল করে সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে বিএনপি নতুন ফন্দি আকে, অবশ্য নতুন বল্লে ভুল হবে এটা মালদীপের একটি আন্দোলনের কপি পেস্ট ভারতীয় পণ্য বর্জন #বয়কট ইন্ডিয়া।
এই আন্দোলনের উদ্দেশ্য কি?
নির্বাচন বয়কটের বিএনপির হাইকমান্ডের ব্যর্থতা ঢাকার চেস্টা, বাংলাদেশের বিরুদ্ধে স্যাংশন আনতে ব্যার্থ লবি গ্রুপের বিএনপিকে দেয়া স্বান্তনা, বিএনপি কর্মীদের ব্যস্ত রাখা, বাজারের পণ্য সরবরাহ ও বিপননে চাপ সৃস্টি করে কৃত্তিম সংকট তৈরী করে সরকারকে চাপে ফেলা, সিন্ডিকেট ও মজুদদারী করে মুনাফা লাভ ইত্যাদি।
দেখা যাচ্ছে এই আন্দোলনের সাথে জনগনের ইচ্ছা বা প্রাপ্তির কিছুই নাই। আসলে বিএনপি’র একমাত্র লক্ষ যেকোন ইস্যুতে সরকার পতন ঘটিয়ে ক্ষমতায় যাওয়া।
ভোট বর্জনে সরকার পতন, অগ্নি সন্ত্রাস করে সরকার পতন, বন্যা হলে সরকার পতন, সড়ক দূঘটনা হলে সরকার পতন, আরব বসন্ত হলে সরকার পতন, শ্রীলঙ্কার অর্থনীতি দেউলিয়া হলে সরকার পতন, করোনা মহামারিতে সরকার পতন, মাকিন স্যাংশন আসলে সরকার পতন, ভিসা রেস্ট্রিকশনে সরকার পতন, চন্দন নন্দীর লেখায় সরকার পতন, ভিপি নুরের ইস্রাইলী গোয়েন্দার বৈঠকে সরকার পতন, সাজাপ্রাপ্ত তারেকজিয়ার ফোনালাপে সরকার পতন, ১০ নভেম্বর সরকার পতন, ২৮ ডিসেম্বর সরকার পতন, ঈদের পর সরকার পতন।
সোসাল মিডিয়ায় অভিনব প্রতারণা :
সামাজিক মাধ্যম ব্যবহারকারীদের চক্র পিনাকী ভট্রাচার্জ, নাগরিক টিভি প্রমুখ ভারতীয় পণ্য বর্জনের আহ্বান জানিয়ে ক্যাম্পেইন শুরু করেন। বিভিন্ন রকমারি ইনফটোগ্রাফিক দিয়ে সাধারণ জনগনকে বিভ্রান্ত করছে।অপ্রাপ্ত বয়স্কদের নিয়ে দৃষ্টিকাড়া কন্টেন্ট দিয়ে কিছু হোম মেইড ভিডিও তৈরী করে সামাজিক মাধ্যমে ‘ইন্ডিয়া আউট’ ও ‘বয়কটইন্ডিয়ানপ্রোডাক্টস’ হ্যাশট্যাগের ব্যবহারও করছে। কিন্তু বাজারে এসবের কোনই প্রভাব নেই বল্লেই চলে, বরং শুল্ক বন্দরগুলোর জরীপে দেখা যায় আমদানীর পরিমান বাড়ছে, কারণ ডলার সমস্যায় গত বছরের তুলনায় এবছর ঋণপত্র খোলার পরিমান বাড়ছে।
যেসব নিত্য ব্যবহার্য ভোগ্যপণ্য ভারত থেকে আমদানি করা হয় সেগুলোর তালিকা করে ছবি জুড়ে বর্জনের ডাক দিচ্ছেন। আর এগুলোর বিকল্প হিসেবে বাংলাদেশি বিভিন্ন উৎপাদিত পণ্য ব্যবহারে আহ্বান জানাচ্ছেন তারা। জানা যায় টাকার বিনিময়ে পণ্যের ছবি বা বিজ্ঞাপনও প্রচার করা হচ্ছে।
অথচ বাংলাদেশে ভারত থেকে প্রায় ৯৭ ধরনের পণ্য আনে, সেগুলোর প্রতিস্থাপক পণ্যইতো আমাদের দেশে নাই, গুণগত মানের কথা না হয় বাদই দিলাম। কাজেই এসব অপরিপক্ষ আন্দোলনে আর দুরভিসন্ধিমূলক রাজনৈতিক কাজের খেসারত দিতে হতে পারে সাধারণ মানুষদের। দেখেন মালদীপের অবস্থা, ইন্ডিয়া আউট ক্যাম্পেইনের পর প্রেসিডেন্টে মইজু ইম্পিচমেন্টে পড়েছে, সংসদ এখনো ৮ সীট খালি, সংসদে হাতাহাতি প্রতিদিনের ঘটনা, আর জিনিস পত্রের দাম হু হু করে বাড়ছে মালদীপে। আর সবচেয়ে বিরুপ প্রভাব পড়েছে মালদীপের জাতীয় আয় পর্যটন খাতে। এরকম পরিস্থিতিতে পযটকরা ভ্রমণে অনিহা দেখাচ্ছেন।
ম্যারিকো বাংলাদেশ কেস স্টাডি:
তারা ভারতীয় পণ্য বর্জন আন্দোলন সফল দেখাতে ম্যারিকো এবং অন্যান্য কিছু মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানির শেয়ার মূল্য পতনের স্ক্রীণশট দেখান। অথচ ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে যারা বিনিয়োগ করেন বা সাধারণ ধারণা রাখেন তারা জানেন সেকেন্ডারি মার্কেটে শেয়ার প্রাইস দাম উঠা নামার ক্ষেত্রে রিটেইল বাজারে পণ্য কেনা বেচার সম্পর্ক অনেক খুবই কম, অন্তত ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে। বরং এখানে অন্যান্য ফেক্টর যেমন ডেবিডেন্ট ডিক্লেয়ার, ডাইরেক্টর বা ইন্সটিটিউট শেয়ার ক্রয় বিক্রয়, ইপিএস ঘোষণা ইত্যাদি। মজার ব্যাপার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে এমন অনেক শেয়ারের মূল্য বাড়তে থাকে যেগুলোর কোম্পানি বন্ধ বা জেড ক্যাটাগরির, আবার অনেক মৌলভিত্তির শেয়ারের দাম কমে যায় শেয়ার সাপ্লাই ডিমান্ডের উপর ভিত্তি করে।
কেন ভারত থেকে আমদানী?
ভারতীয় পণ্য আমদানিকারকরা বলছেন, এখন পর্যন্ত আমদানিতে কোনো তারতম্য নেই। তাছাড়া, এই প্রচারণায় যেসব পণ্য বর্জনের কথা বলা হচ্ছে, দুই দেশের আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যে সেগুলোর অনুপাত খুবই সামান্য।
ভৌগলিক অবস্থানের কারণেই ভারত থেকে বাংলাদেশে পণ্য বেশি আমদানি করা হয়। কারণ যেসব পণ্য ভারত থেকে আমদানি করা হয়, সেগুলো অন্য দেশ থেকে আনতে গেলে খরচ ২০ থেকে ৪০ শতাংশ বেড়ে যাবে। সহজ কথায় ১৪ বিলিয়ন ডলারের ইমপোর্টের পরিবহন ফ্রেইট ব্যয়সহ তখন ২০ বিলিয়ন ডলারে পৌছাবে।
অন্য দেশের তুলনায় কম সময়ে ভারত থেকে পণ্য আমদানি করা সহজ হয়। সড়ক পথেআনা যায় বলে পরিবহন খরচও কম হয়। এই কারণে পেঁয়াজ, মরিচ বা চালের মতো পণ্য, শিল্পের কাঁচামাল অন্য দেশে পাওয়া গেলেও আমদানিকারকদের প্রথম পছন্দ ভারত।
ভারতের কাঁচামালের জন্য আজকে এলসি খুললে কালকের ট্রাকে পণ্যটা ঢুকে যায়।পচনশীল পণ্যের ক্ষেত্রে সময় গুরুত্বপূর্ণ। পণ্য আগে বাজারে ছাড়া গেলে ব্যবসাও ভালো হয়।
ভারত থেকে কি কি আমদানি হচ্ছে কেন হচ্ছে?
ভারত থেকে প্রতি বছর বাংলাদেশের আমদানির পরিমাণ প্রায় ১৪ বিলিয়ন ডলার। বাংলাদেশে ভারত থেকে প্রায় ৯৭ ধরনের পণ্য আমদানী হয়, যার একটা বড় খাত দখল করে আছে তুলা, সুতাসহ পোশাক খাতের কাঁচামাল, বছরে প্রায় ৩ শ কোটি ডলার। এবার ভাবুন আমাদের সবচেয়ে বড় অর্থ উপার্যনের খাত আরএমজি সেক্টর এর কাচামাল যদি ভারত বাদ দিয়ে অন্যদেশ থেকে আমি সে আমদানি ব্যয় তখন সাড়ে ৪শ কোটি ডলারে। এছাড়া ভারত থেকে পণ্য খালাস, পরিবহন ও বাজারজাতকরনে রয়েছে বাংলাদেশীদের বড় শ্রমবাজার, মানুষেরা দৈনিক মজুরী পাচ্ছেন, ট্রাক ভাড়া পাচ্ছেন, গুদাম ভারা পাচ্ছেন।
দ্বিতীয় অবস্থানে তেল ও অন্যান্য খনিজ জ্বালানি। বছরে প্রায় দুশো কোটি ডলার।বাংলাদেশ বছরে ডিজেলের চাহিদা প্রায় ৪৬ লাখ টন। এর আশি ভাগই সরকারকে আমদানি করতে হয়। ডিজেলে ব্যবহার হয় কৃষিকাজে, পরিবহনে ও বিদ্যুৎ খাতে। ভারত থেকে যতো সহজ, সস্তা ও সবল্প সময়ে রেল ওয়াগন, ট্রাক লরী বা পাইপ লাইন বিয়ে জালানী আমদানি করা যায় অন্য দেশ থেকে কেনা সময় ও ব্যয় সাপেক্ষ হবে, এটাতো সহজ হিসাব।
তৃতীয় অবস্থানে আছে খাদ্য, যথা: পেঁয়াজ, দুধ ও দুগ্ধজাত খাবার, সূর্যমুখী ও সয়াবিন তেলসহ ভোজ্য-তেল, চিনি, মধু, কোমল পানীয়, চিপস, বিস্কুট, চকলেট ও ক্যান্ডি জাতীয় খাবার ইত্যাদি। বছরে প্রায় দেড় বিলিয়ন ডলারের। ভারতীয় পণ্যের বিপরীতে আমার দেশের পণ্য থা্কতে পারে। সেক্ষেত্রে দেশি পণ্য বলে যে কেউ তার পণ্য ক্রেতার সামনে এগিয়ে দিতে পারেন। সুতরাং প্রতিযোগিতায় টিকতে গেলে আমাদের পণ্যের মান ও দাম নিয়ে প্রতিযোগিতা করতে হবে। কম দামে ভাল পণ্য কেনার বিষয়টি মানুষের ক্রয় ক্ষমতার সঙ্গে জড়িত। এছাড়া বিনোদন ও পোশাকের ক্ষেত্রে মা-বোনদের ভারতীয় ব্রান্ড পছন্দ হতেই পারে, সেটার পরিবর্তে মনগড়া কিছু চাপিয়ে দেয়াটা হবে অন্যায়।
ভারতের ভিউ পয়েন্ট :
আর যদি ভারতের পয়েন্ট অব ভিউ দেখি, ভারত দেশ তার প্রতিবেশিদের সাথে বাণিজ্য করতে পেরেছে নিজের যোগ্যতায়। ভারত সীমান্তের বিশাল অংশ নিয়ে রয়েছে পাকিস্তান ও চীন যাদের সাথে ভারতের রয়েছে বৈরী সম্পর্ক, তাই ভারত নিজের প্রয়োজনেই বাংলাদেশের সাথে বাণিজ্য বাড়িয়েছে।
বিএনপি- জামাতের ধমীয় ট্রপকার্ড :
ধর্মীয় সুড়সুড়ি দিয়ে ভাগ করে সাধারণ মানুষকে শোষন করার কৌশল মৌলবাদীদের বহু পুরোনো। এরা হিন্দু মুসলমান দু’ভাগ বানিয়ে দেয়। একে অপরকে অপছন্দ করার এমন বিষ ঢুকায়। ফলে আমাদের মাথা থেকে ধর্মীয় বিরোধিতার ভূত যায়না। এখনও বহু বাংলাদেশি ভাবছে ভারত হিন্দু ধর্মের মানুষের দেশ, কেন ভারতে কি মুসলিমরা কি আল্লাহর বান্দা না, নবীর উম্মত না?
বাংলাদেশের বাণিজ্যনীতি:
এবার আসুন বাংলাদেশ পয়েন্ট অব ভিউ
বাংলাদেশের পররাস্ট্রনীতি দিয়ে গেছেন বঙ্গবন্ধু, Friendship to all malice to none. আমাদের কোন প্রভু নেই আছে বন্ধু। দ্রত বিকাশমান বন্ধুপ্রতিম দেশ ভারতের সাথে আমাদের অর্থনৈতিক সুসম্পর্ক থাকবে এটা খুবই স্বাভাবিক। এমনকি দুটি দেশ যদি বৈরী হয় তবুও বাণিজ্যিক সম্পর্কের বয়কট হয়না,তাইতো দেখি ভারতের সাথে চীন বা পাকিস্তানের বাণিজ্যিক সম্পর্কের কোন বয়কট হয় না, বরং দিন দিন বেড়েই চলেছে।
ভারতের সাথে আমাদের মুক্তিযুদ্ধ, অস্থায়ী সরকার, শরনারর্থী, পাকিস্তানের বিরোদ্ধে যুদ্ধে জয়লাভে ভূমিকা, কৃস্টি কালচার সংস্কৃতির মিলবন্ধনের কথা আপনারা সবাই জানেন, নতুন করে বলে আপনাদের সময় নস্ট করবো না। বরং সম্প্রতিক কালের নিরাপত্তা, বাণিজ্য, সংস্কৃতি, যাতায়াত, অজন গুলো আলোচনা করি চলুন।
স্থল সীমা সমঝোতা, ট্রান্সবোডার রেলওয়ে লাইন, ফ্রেন্ডশিপ পাইপলাইন, কোস্টাল সার্ভাইবাল রাডার,
বিদ্যুৎ কেন্দ্র, এনাজি করিডোর ইত্যাদি।
আর ভূলে গেলে চলবেনা বিগত করোনা মহামারিতে ভারত আমাদের ভ্যাক্সিন, অক্সিজেন এবং জীবনরক্ষাকারী ইকুপমেন্ট দিয়েছিল। আর এখনো ভারতের সাস্থ্যগ্রহনে বিদেশি নাগরীকদের মাঝে বাংলাদেশীদের
সংখ্যা সবচেয়ে বেশি।
বর্জনে বিএনপির অর্জন :
বিএনপি নেতা রুহুল কুদ্দুস তালুকদার সম্প্রতি ভারতীয় শাল পুড়িয়ে একাত্ততা পোষন করলেন। সর্বশেষ বিরোধী দল বিএনপির একাধিক শীর্ষ নেতাকে এই ক্যাম্পেইনের সাথে সংহতি প্রকাশ করতে দেখা গেছে। শীতকালে চাঁদর ব্যবহার করে গরমকালে ফেলে দেওয়াটা অকৃতজ্ঞতার সামিল। বিএনপি ক্ষমতায় থাকতে কিংবা বিরোধী দলে থাকতে দেখা গেছে ভারত বন্দনা করতে অথচ এখন শুধু ভারত তাদের ক্ষমতার মসনদে বসায় নাই বলেই এই ভারত বর্জন। অবশ্য এর আগে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের উপর ভর করে সবপ্নে বিভোর ছলো বিএনপি, কোটি ডলারের মার্কিন লবিস্ট ফার্মও নিয়োগ করেছিল বাংলাদেশের উপর স্যাংশন আনার জন্য। বিএনপির রাজনীতি হচ্ছে ক্ষমতায় যাবার রাজনীতি, জনগনের কথা তারা ভাবেন না। আসলে জনগনের পালস না বুঝে ভোট বর্জন আর অগ্নি সন্ত্রাসের পথে চলায় এদেশের জনগনই বিএনপি কে বর্জন করেছে।
(লেখক : স্কোয়াড্রন লীডার (অবঃ)সাদরুল আহমেদ খান, সদস্য অর্থ ও পরিকল্পনা বিষয়ক উপকমিটি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ)