বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে দেশের উদ্ভূত পরিস্থিতিতে গত ৩ আগস্ট দেশ ছাড়েন ডিএসসিসি মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস। গত ৫ আগস্ট সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে দেশ ছাড়েন। পরদিন থেকে দুর্নীতিসহ নানা অভিযোগে ডিএসসিসির ভারপ্রাপ্ত প্রধান প্রকৌশলী আশিকুর রহমানকে বরখাস্তের দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন ডিএসসিসির কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। এমন আন্দোলনে ডিএসসিসি কার্যত অচল হয়ে পড়ে। পরে গত ১৪ আগস্ট ডিএসসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মিজানুর রহমান স্বাক্ষরিত এক দাপ্তরিক আদেশে আশিকুর রহমানকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। এই আদেশে তার বিরুদ্ধে দায়িত্ব পালনে অবহেলা, অসদাচরণ, অদক্ষতা ও দুর্নীতির অভিযোগে গুরুদণ্ডে দণ্ডনীয় অপরাধের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। আশিকুর রহমানকে পুনর্বহাল করে আজ রাত ৮টা পর্যন্ত স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় থেকে কোনো অফিস আদেশ ডিএসসিসি পায়নি। কীসের ভিত্তিতে তিনি আবার নগর ভবনে গেলেন, তার সঠিক কোনো তথ্য জানা যাচ্ছে না। তবে আশিকুর রহমান তার দপ্তরের অন্য কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জানিয়েছেন, তিনি আদালত থেকে একটি কাগজ নিয়ে এসেছেন। সে কাগজে কী লেখা, তা আবার কাউকে দেখাননি। তবে তিনি বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেনকে টাকা-পয়সা দিয়ে সন্তুষ্টি করে নগর ভবনে ঢুকেছেন, এমনটি সবাই বলাবলি করছে।
নিজস্ব প্রতিবেদক : ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) সাবেক মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপসের ঘনিষ্ঠ ছিলেন সংস্থাটির ভারপ্রাপ্ত প্রধান প্রকৌশলী আশিকুর রহমান। দেশের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর দুর্নীতির অভিযোগে তাকে বরখাস্ত করে ডিএসসিসি। সেই কর্মকর্তা আজ সোমবার (২ সেপ্টেম্বর) বহিরাগত একদল লোক নিয়ে নগর ভবনে ঢোকেন। আগের মতোই নিজ দপ্তরে সকাল থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত অফিস করেছেন। অভিযোগ উঠেছে, বিএনপি নেতা ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র প্রার্থী ইশরাক হোসেনের যোগসাজশে নগর ভবনে ফিরে আসেন তিনি।
বরখাস্ত হওয়ার পরও আশিকুর রহমানের এমন কর্মকাণ্ডে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ডিএসসিসির কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। তাদের অভিযোগ, বিএনপি ও তার অঙ্গসংগঠনের শতাধিক নেতাকর্মীর সহযোগিতায় নগর ভবনে ঢুকেছেন আশিকুর রহমান। তারা সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত নগর ভবনের প্রতিটি ফ্লোরে মহড়া দেন। অথচ এই আশিকুর রহমানই ডিএসসিসির সাবেক মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপসের যত অনিয়ম-দুর্নীতির মূলহোতা ছিলেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ডিএসসিসির ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা গণমাধ্যম কে জানান, আশিকুর রহমানের পক্ষ হয়ে যারা আজ নগর ভবনে মহড়া দিয়েছেন, তারা সবাই বিএনপি নেতা ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র প্রার্থী ইশরাক হোসেনের কর্মী হিসেবে পরিচিত। ফলে সিটি করপোরেশনের প্রশাসক, প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা, সচিবসহ কেউ প্রতিবাদ বা আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার সাহস পাননি। আর আশিকুর রহমানের এই ফিরে আসার পেছনে শত কোটি টাকার লেনদেন হয়েছে বলে আলোচনা-সমালোচনা চলছে।
ডিএসসিসির প্রকৌশল বিভাগ সূত্র জানায়, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে দেশের উদ্ভূত পরিস্থিতিতে গত ৩ আগস্ট দেশ ছাড়েন ডিএসসিসি মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস। গত ৫ আগস্ট সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে দেশ ছাড়েন। পরদিন থেকে দুর্নীতিসহ নানা অভিযোগে ডিএসসিসির ভারপ্রাপ্ত প্রধান প্রকৌশলী আশিকুর রহমানকে বরখাস্তের দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন ডিএসসিসির কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। এমন আন্দোলনে ডিএসসিসি কার্যত অচল হয়ে পড়ে। পরে গত ১৪ আগস্ট ডিএসসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মিজানুর রহমান স্বাক্ষরিত এক দাপ্তরিক আদেশে আশিকুর রহমানকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। এই আদেশে তার বিরুদ্ধে দায়িত্ব পালনে অবহেলা, অসদাচরণ, অদক্ষতা ও দুর্নীতির অভিযোগে গুরুদণ্ডে দণ্ডনীয় অপরাধের কথা উল্লেখ করা হয়েছে।
বরখাস্ত হওয়ার পরও আশিকুর রহমান আজ নগর ভবনে অফিস করছেন বলে গণমাধ্যমে নিশ্চিত করেছেন ডিএসসিসির সচিব মোহাম্মদ বশিরুল হক ভূঁঞা। তবে তিনি এ বিষয়ে বিস্তারিত জানার জন্য সংস্থাটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মিজানুর রহমানের সঙ্গে কথা বলার পরামর্শ দেন। পরে মিজানুর রহমানের মুঠোফোনে একাধিকবার কল দিলেও তিনি রিসিভ করেননি।
তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ডিএসসিসির প্রকৌশল দপ্তরের এক কর্মকর্তা বলেন, আশিকুর রহমানকে পুনর্বহাল করে আজ রাত ৮টা পর্যন্ত স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় থেকে কোনো অফিস আদেশ ডিএসসিসি পায়নি। কীসের ভিত্তিতে তিনি আবার নগর ভবনে গেলেন, তার সঠিক কোনো তথ্য জানা যাচ্ছে না। তবে আশিকুর রহমান তার দপ্তরের অন্য কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জানিয়েছেন, তিনি আদালত থেকে একটি কাগজ নিয়ে এসেছেন। সে কাগজে কী লেখা, তা আবার কাউকে দেখাননি। তবে তিনি বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেনকে টাকা-পয়সা দিয়ে সন্তুষ্টি করে নগর ভবনে ঢুকেছেন, এমনটি সবাই বলাবলি করছে।
এ বিষয়ে জানতে বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেন ও আশিকুর রহমানের মুঠোফোনে একাধিকার কল দিলেও তারা রিসিভ করেননি। তবে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির এক নেতা জানান, ইশরাকের সমর্থন নিয়েই আশিকুর রহমান নগর ভবনে অফিস করেছেন। তবে লেনদেনের বিষয়টি স্পষ্ট নয়।
আর মন্ত্রণালয়ের আদেশ ছাড়া আশিকুর রহমানকে কীভাবে নগর ভবনে পুনর্বহাল করা হবে, তা নিয়ে রাত ৮টা পর্যন্ত নগর ভবনে সংস্থাটির ঊর্ধ্বতনরা মিটিং করছেন।
দক্ষিণ সিটির প্রকৌশল বিভাগ সূত্র জানায়, আশিকুর রহমান ১৯৯৩ সালের ২৭ জানুয়ারি ডিএসসিসিতে সহকারী প্রকৌশলী (পুর) হিসেবে যোগদান করেন। এরপর ২০০১ সালে নির্বাহী প্রকৌশলী ও ২০১৪ সালে তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী পদে পদোন্নতি পান। ২০১৫ সালে মেয়র হানিফ ফ্লাইওভারে টোল সংক্রান্ত একটি ঘটনায় আশিকুর রহমানকে দক্ষিণ সিটি করপোরেশন থেকে সরিয়ে নিতে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেন সাবেক মেয়র সাঈদ খোকন। তখন তাকে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের প্রকৌশল বিভাগে দায়িত্ব দেওয়া হয়।
পরে ২০২১ সালের ৭ জুন আবার তাকে নগর ভবনে তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী হিসেবে নিয়োগ দেন সাবেক মেয়র শেখ তাপস। ২০২২ সালের ২০ অক্টোবর তাকে ভারপ্রাপ্ত প্রধান প্রকৌশলী হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয়। গত ১৪ আগস্ট ডিএসসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মিজানুর রহমান স্বাক্ষরিত এক দাপ্তরিক আদেশে তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়।