নিজস্ব প্রতিবেদক : সিভিল সার্জন পদে পদোন্নতি পেয়ে নিজ জেলা চুয়াডাঙ্গা জেলার মেডিক্যাল এ কর্মরত থাকার অভিযোগ ডাঃ হাদী জিয়া উদ্দিন এর বিরুদ্ধে।আলমডাঙ্গা থানাধীন মেডিকেল অফিসার হিসেবে কর্মজীবন শুরু করে দ্রুত সময়ে পদোন্নতি পেয়েছেন তিনি। বর্তমান সিভিল সার্জন হাদী জিয়াউদ্দিন দম্পতি একই জেলায় কর্মরত থাকায় এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। এছাড়াও চুয়াডাঙ্গা মেডিকেলে উদ্বেগ জানিয়েছে চিকিৎসকরা।

সাম্প্রতিক অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের যখন সকল সেক্টরে সংস্কারের কাজ চলমান থাকলেও একটি সময় স্বাস্হ্যবিভাগের নীতিমালা ২০১৬ এর সিভিল সার্জন পদায়নের ক্ষেত্রে নিজ জেলা পরিহারের বিধান স্পষ্ট।তবে চুয়াডাঙ্গা মেডিকেল এর দায়িত্বরত সিভিল সার্জন ডাঃ হাদী জিয়া উদ্দিন আহমেদের ক্ষেত্রে বিধি লঙ্ঘন হচ্ছে বলে জানা যায়। অনুসন্ধান বলছে , সিভিল সার্জন চুয়াডাঙ্গা জেলারই একজন বাসিন্দা ডাঃ হাদী জিয়াউদ্দিন আহমেদ আলমডাঙ্গা থানাধীন উদয়পুর গ্রামের মৃতঃ আহমেদ আলীর সন্তান। বর্তমান স্টেশন পাড়া আলমডাঙ্গার নিজ বাড়িতে বসবাস করেন। তার স্ত্রী ডাঃ শারমিন আক্তার আলমডাঙ্গা থানাধীন যাদবপুর গ্রামের মৃতঃ আবু সাঈদের কন্যা।

বর্তমান আলমডাঙ্গা স্বাস্হ্য কমপ্লেক্সে স্বাস্হ্য ও পঃ পঃ কর্মকর্তা হিসাবে কর্মরত আছেন। দীর্ঘদিন একই জেলায় বসবাস করার স্বার্থে নিজ জেলায় প্রভাব খাটানোর অভিযোগ রয়েছে বিস্তর। এক্ষেত্রে পরিচিত আরেক নাম ডাঃ হাদী জিয়াউদ্দিন আহমেদ।
নিজ জেলাতে তিনার ডক্টরস কেয়ার নামে একটি প্রাইভেট হাসপাতাল ও ডায়াগনষ্টিক সেন্টার রয়েছে। গত ২০২২ সালে আলমডাঙ্গা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা থাকা অবস্থায় দালাল এর মাধ্যমে নিজ ক্লিনিকে রোগী বাগিয়ে নেওয়া ও বিভিন্ন অনিয়ম অব্যবস্থাপনার বিষয় তিনার বিরুদ্ধে বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এছাড়া দ্যা নিউজ টোয়িন্টিফোর ডটকমে ২০২৪ সালে ৯ ই মার্চ স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক থাকা অবস্থায় স্বাস্থ্য সেবা পার-২ শাখার যুগ্ম সচিব মন্জুরুল হাফিজ স্বাক্ষরিত প্রজ্ঞাপনে ওএসডি করা হয়, বলে এক প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে।
সেই প্রতিবেদনেও অবৈধ হাসপাতাল পরিচালনার অভিযোগ উঠে। ডক্টরস কেয়ার এন্ড স্পেসালাইস্ট হসপিটালটি ডাক্তার দম্পতি পরিচালনা করার অভিযোগ আছে । ডাঃ হাদী জিয়াউদ্দিন আহমেদ আলমডাঙ্গা স্বাস্হ্য কমপ্লেক্সে উপজেলা স্বাস্হ্য ও পঃ পরিকল্পনা কর্মকর্তা হিসেবে গত বছরের ৯ এপ্রিল প্রথম প্রমোশন পেয়ে ম্যাটসে অধ্যক্ষ হিসেবে পদোন্নতি পান।
তবে একই বছরের মাস পর ৯ অক্টোবর সিভিল সার্জন হিসেবে ঝিনাইদাহ হতে পদোন্নতি পেলেন। ওই বছরের ২৫ ডিসেম্বর ট্রান্সফার হয়ে চুয়াডাঙ্গা জেলায় সিভিল সার্জন হিসেবে যোগদান করেন। অথচ বিগত আওয়ামী লীগ সরকার আমলেও চুয়াডাঙ্গা -১ আসনের সাবেক এমপি সোলায়মান হক জোয়ার্দার সেলুন এর ঘনিষ্ঠজন হিসাবে প্রশাসনিক পদ অলংকৃত করেন বলে এমন খবর চাউর হয়েছে। ক্ষমতার পালা বদলের সাথে সাথে নিজেকে বর্তমান সম্ভাব্য দলের একনিষ্ট সমর্থক হিসাবে প্রচার করেন। ডাঃ হাদী জিয়া উদ্দিন আহমেদ কর্মজীবনে তিনি অত্যন্ত চতুরতার সাথে ক্ষমতাসীন দলের সহিত সখ্যতা রাখেন বলে গেছে।
তার অন্যতম বাস্তব উদাহরণ হিসেবে বিগত সরকারের শাসনামলেও স্থানীয় সংসদ সদস্য সোলায়মান হক জোয়ার্দার সেলুনের সহিত তার পরিবারসহ ফুলেল শুভেচ্ছা বিনিময় এবং নিয়মিত যাতায়াতের বিষয়ে জনমনে ব্যাপক বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করছেন। সংশ্লিষ্ট সূত্রের ধারণা মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে নিজ জেলায় দায়িত্ব পালন করেছেন।আলমডাঙ্গা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে স্বাস্থ্য ও পঃপঃ কর্মকর্তা হিসাবে একরোখা দাপুটে প্রভাব ছিল। বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের আমলে ঠিক পরিবারতন্ত্র হিসাবে নিজে সিভিল সার্জন এবং তিনার স্ত্রী ডাঃ শারমিন আক্তার আলমডাঙ্গা হারদীতে স্বাস্থ্য ও পঃপঃ কর্মকর্তা হিসেবে কর্মরত আছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক (অবঃ) অনেকের মতে স্বাস্থ্যবিধি বিষয়ে আমরা অবগত নই তবে প্রশাসনিক পদে থাকায় বিভিন্নক্ষেত্রে প্রভাব বিস্তার দৃশ্যমান। এদিকে তার স্ত্রী শারমিন আক্তার চুয়াডাঙ্গা জেলার আলমডাঙ্গা উপজেলার স্থায়ী বাসিন্দা হওয়া স্বত্ত্বেও নানারকম কৌশল অবলম্বন করে আলমডাঙ্গা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা হিসেবে বহাল তবিয়তে এখনো কর্মরত আছেন। স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা যায় , অর্থের প্রভাব খাটিয়ে অনেক অসম্ভবকে সম্ভব করেন এই চিকিৎসক দম্পতি। স্বামী দম্পতি সুস্পষ্টভাবে ৭(ক) ধারা লঙ্ঘন করেছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নীতিমালা অনুযায়ী একজন সিভিল সার্জনের নিজ এলাকায় দায়িত্ব পালনের সুযোগ নেই। কিন্ত সেই অসম্ভবকে সম্ভব করেছেন চুয়াডাঙ্গা জেলার বর্তমান সিভিল সার্জন ডা. হাদী জিয়াউদ্দিন আহমেদ। এ বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক শেখ ছাইদুল হকের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, একজন সিভিল সার্জনের কখনো নিজ এলাকায় নিয়োগ বা বদলীর সুযোগ নেই।
তবে কিভাবে, কোন উপায়ে তিনি নিজ এলাকায় সিভিল সার্জন হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন এটা তার জানা নেই বলে জানান স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক। একই প্রশ্নে স্বাস্হ্য অধিদপ্তরের আইন শাখার কর্মকর্তা পরিমল বাবু বলেন, স্বাস্থ্য বিধী অনুযায়ী নিজ জেলাতে সিভিল সার্জন হিসেবে থাকার সুযোগ নেই।
এসব বিষয়ে জানতে চেয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের প্রশাসন শাখায় যোগাযোগ করা হলে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা অফিসে উপস্থিত নেই বলে জানান। অত্র এলাকার স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা যায়, অতি মুনাফালোভী এই ডা. দম্পতির রয়েছে নামে-বেনামে বিপুল পরিমান সম্পদ। পেশায় চিকিৎসক হওয়ার সুবাধে আয়েশা পার্ক নামে গড়ে তুলেছেন আটতলা বিশিষ্ট বহুতল ভবন যেখানে রয়েছে তাদের নিজেদের মালিকানায় পরিচালিত ডক্টরস কেয়ার নামে একটি হসপিটাল। তবে কাগজে কলমে মালিকানা দেখানো হয়েছে বিভিন্নজনের নামে। সরকারী চাকরিজীবী হওয়ায় বহুতল ভাবনটির কাগজে কলমে মালিকানায় রয়েছেন ডাক্তারের শাশুড়ী মালিহা আক্তার পলি।
তার নামেই ভবনটির নাম দেয়া হয়েছে আয়েশা পার্ক।বিধি মোতাবেক নিজ জেলাতে বহাল থাকা এবং নিজ নামে ক্লিনিক পরিচালনা করায় ক্লিনিক অভিযানের ক্ষেত্রেও বৈষম্যতার শিকার হওয়ার বিষয় কিছুদিন পূর্বের অভিযানে জনগণে অস্বস্তি রয়েছে বলে অনেকের ধারনা। উল্লেখ্য যে, গত ৬ ই ফেব্রুয়ারী একাধিক জাতীয় দৈনিক পত্রিকায় রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় নিজ জেলায় কর্মরত চিকিৎসক দম্পতি শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশিত হলেও তার টনক নড়েনি।
নিজ জেলায় পোস্টিং অন্য প্রতিষ্টান পরিচালনা করায় বিধি লঙ্ঘন করেছেন কিনা জানতে চাওয়া হলে জিয়া উদ্দিন গণমাধ্যমকে বলেন, মন্ত্রণালয় আমাকে পোস্টিং দিয়েছে আমি জোরপূর্বক আসি নাই। আপনি খোঁজ নিয়ে দেখেন ৫০ ভাগ সিভিল সার্জন নিজ জেলাতেই অবস্থান করছে। আমি কোনো তদ্বির করে আস্তে হয়নি।