গত শুক্রবার চলে গেলো বর্তমান বিশ্বের অন্যতম ক্ষমতাধর নেতা ভ্লাদিমির পুতিনের জন্মদিন

Uncategorized অন্যান্য

কুটনৈতিক প্রতিবেদক ঃ গতকাল শুক্রবার চলে গেলো বর্তমান বিশ্বের অন্যতম ক্ষমতাধর নেতা ভ্লাদিমির পুতিনের জন্মদিন, ইউক্রেনে চলমান রাশান আগ্রাসনের মধ্যেই ৭০ বছরে পা দিলেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট।

১৯৫২ সালে লেলিনগ্রাদের সাধারণ এক পরিবারে জন্ম নিয়েছিলেন পুতিন। তার বাবা ছিলেন সোভিয়েত নৌবাহিনীর সদস্য। আর বড় হয়ে আইনশাস্ত্রে ডিগ্রি নেয়া ভ্লাদিমির পুতিন যোগ দেন গোয়েন্দা সংস্থায়।

কেজিবির সাবেক এজেন্ট থেকে নব্বইয়ের দশকে হয়ে ওঠেন রাশিয়ার জনপ্রিয় নেতা।পরবর্তীতে বরিস ইয়েলেৎসিন সরে দাঁড়ানোর পর ১৯৯৯ সালে ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পান পুতিন।২০০০ সালের নির্বাচনে হেসে-খেলে জয়ী হন তিনি। এরপর আর তাকে পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি।একসময় তিনি হয়ে ওঠেন রাশিয়ার অন্যতম প্রভাবশালী নেতা।

২০১৮ সালে চতুর্থবারের মতো আসেন রাশিয়ার ক্ষমতায়।পাকাপোক্ত করেন তার ক্ষমতা।একই সাথে রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা খর্ব করার পাশাপাশি নিজেকে করেন সর্বময় ক্ষমতার কেন্দ্র।

নেতা পুতিনের পশুপাখির প্রতি রয়েছে বিশেষ অনুরাগ।তার একটি প্রিয় কুকুর রয়েছে।এছাড়া,ভালোবাসেন খেলাধুলাও।অবসরে হান্টিং,শুটিং এর পাশাপাশি পড়েন বই এবং সোভিয়েত ইউনিয়ন এর ইতিহাস।খাদ্যরসিক পুতিন ভালবাসেন আইসক্রীম এবং বিশেষভাবে রান্না করা তৈলাক্ত সী ফিস।

সাম্প্রতিক সময়ে বার্ধক্যজনিত কিছু অসুস্থতা থাকলেও প্রায়শই তিনি রাশিয়ার বিভিন্ন অঞ্চলে ভ্রমণ এবং ইউক্রেন যুদ্ধের ব্যপারে জনসভা করে থাকেন।

ইউক্রেন সহ সোভিয়েত ইউনিয়ন ভুক্ত দেশগুলোকে এক রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণে আনা এবং অংগীভূত করার ব্যপারেও তার রয়েছে বিশাল আগ্রহ।ইতিমধ্যেই বেশ কয়েকবার ভাষণে তিনি ইউক্রেনকে রাশিয়ার এক এবং অবিচ্ছেদ্য অংশ বলেও উল্লেখ করেছেন।দখল করেছেন জর্জিয়ার কিছু অংশ।
পুতিন আর্মেনিয়া-আজারবাইজান সংঘাত,সিরিয়া,মিয়ানমার,উত্তর কোরিয়ার মত দেশগুলোতে নিজের স্বার্থ বজায় রাখতে বদ্ধপরিকর হলেও এসব অঞ্চলে পূর্বের তুলনায় রাশিয়ার প্রভাব কমেছে।ইরান,তুরস্ক,চীন সহ অন্যান্য দেশের প্রভাব বাড়তে থাকায় পুতিনকে হতে হয়েছে আরো সতর্ক।

ইউক্রেনে চলমান আগ্রাসনের মাঝেও তার জন্মদিন ধুমধাম করে উদযাপন করবে মস্কো।যদিও ইউক্রেনের যুদ্ধক্ষেত্রে রাশিয়ার অবস্থা বেশ একটা সুবিধার না।ইতিমধ্যে অনেক স্থানে দেখা দিয়েছে সেনা সংকট।অনেকে তরুণ দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন এবং পালাচ্ছেন।

একই সাথে রাশিয়ার অনেক সেনা ইউক্রেনের বিস্তীর্ন অঞ্চল থেকেও পালিয়ে এসেছে।ইউক্রেন প্রতিদিনই একের পর এক অঞ্চল পুনরায় বিজয় করে চলেছে।ইউক্রেন দিনশেষে ক্রিমিয়ার দখল নিতে পারে বলে আশংকা রয়েছে খোদ রাশিয়ান ইন্টালিজেন্স এজেন্সী এবং রাজনীতিবিদদেরই।

সামনের দিনগুলোতে রাশিয়ান সেনা,নৌ এবং বিমান বাহিনীর সামনে কঠিন সময় অপেক্ষা করছে বলছে খোদ রাশিয়ান সংবাদ মাধ্যম।যদিও পুতিন তার যুদ্ধ ”যে কোন মুল্যে চালিয়ে যেতে বদ্ধপরিকর”।পুতিন আর যাই হউক,কোনভাবেই এ যুদ্ধে রাশিয়ার হার মেনে নিবেন না বলেও হুশিয়ারী উচ্চারণ করেছেন।
সে যাই হউক,পরমাণু শক্তিধর রাশিয়ার এ নেতা পরমাণু অস্ত্র প্রয়োগ নিয়ে চিন্তাভাবনা করতে পারেন বলে ধারণা করা হলেও,তার ফলাফল ভয়াবহ হবে বলে ইতিমধ্যেই হুশিয়ারী দিয়েছে ন্যাটো এবং যুক্তরাষ্ট্র।যদিও এ ব্যপারে রাশিয়ার দৃষ্টিভংগী এখনো পরিস্কার না হলেও রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয় ”পরমাণু অস্ত্র ব্যবহার হবে না ” এমন বক্তব্য অনেকবার ই দিয়ে এসেছে।

সাধারণ রাশিয়ানদের মাঝে পুতিনের জনপ্রিয়তা মিশ্র প্রকৃতির।তরুণ প্রজন্ম পুতিনের অনেক পদক্ষেপকে ”ভুল” বললেও প্রবীণেরা অনেকক্ষেত্রেই পুতিনের সিদ্ধান্ত এবং ইউক্রেন দখলের ”পক্ষে”।যদিও ৭ মাসে পুতিনের অর্জন প্রশ্নসাপেক্ষ।তার বিরুদ্ধে অর্থনীতি ধ্বংস,শুধুমাত্র তেল-গ্যাস বিক্রি নির্ভরতা,সামরিক বাহিনীর পরাজয়,ইউক্রেনীয় সেনাবাহিনীর কাছে নিজের সমরাস্ত্র হারানো,গ-ণ-হ-ত্যাসহ বেশ কিছু অভিযোগ করে আসছে বিরোধী রাজনৈতিক গোষ্ঠীগুলো।যদিও পুতিন তা কঠোরহস্তে দমন করেছেন এবং করে চলেছেন..ইতিমধ্যেই ইউক্রেনের চারটি অঞ্চলকে নিজের সীমায় অন্তর্ভুক্ত করেছেন এই নেতা।


বিজ্ঞাপন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *