নিজস্ব প্রতিবেদক ঃ মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর (ডিএনসি), ঢাকা মেট্রোঃ কার্যালয় (দক্ষিণ) কর্তৃক ৫০০ (পাঁচশত) গ্রাম আইসসহ (ক্রিস্টাল মেথ) ‘অভিজাত এলাকার মাদক সিন্ডিকেট’ এর মূলহোতা আটক হয়েছে, এ খবর সংশ্লিষ্ট সুত্রের।
জানা গেছে, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর (ডিএনসি) ‘মাদকাসক্তিমুক্ত বাংলাদেশ’ গড়ার দৃঢ় প্রত্যয়ে সংঘবদ্ধ মাদক কারবারিদের বিরুদ্ধে নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করে আসছে।
এর ধারাবাহিকতায় অধিদপ্তরের ঢাকা বিভাগীয় কার্যালয়ের অতিরিক্ত পরিচালক জাফরুল্ল্যাহ কাজলের সার্বিক নির্দেশনায় এবং ঢাকা মেট্রোঃ কার্যালয় (দক্ষিণ) এর উপ-পরিচালক মোঃ মাসুদ হোসেন এর প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে লালবাগ সার্কেলের পরিদর্শক মোঃ মোফাজ্জল হোসেনের নেতৃত্বে একটি টিম ঢাকা মেট্রোপলিটনের ওয়ারী এলাকায় গতকাল সন্ধ্যা থেকে গত ২ নভেম্বর ভোর পর্যন্ত অভিযান চালায়।
অভিযানে ওয়ারী থানার হাটখোলা রোড এলাকার গ্রীন জোন টাওয়ার থেকে ৫০০ (পাঁচশত) গ্রাম আইস সহ (ক্রিস্টাল মেথ) ‘অভিজাত এলাকার মাদক সিন্ডিকেট’ এর মূল হোতা চন্দন রায় (২৬)কে গ্রেফতার করা হয়।
গ্রেফতারকৃত আসামীর নাম ও ঠিকানা যথাক্রমে, চন্দন রায় (২৬), পিতা- জিতেন রায়, মাতা- কাজল রানী রায়,
ঠিকানাঃ গ্রামঃ কুকুরাদী মাস্টারবাড়ি, থানাঃ টংগীবাড়ি, জেলাঃ মুন্সিগঞ্জ;
বর্তমান ঠিকানাঃ ১/১, গ্রীন জোন টাওয়ার, হাটখোলা রোড, ওয়ারী, ঢাকা।
ঢাকা মেট্রোঃ কার্যালয় (দক্ষিণ) সাম্প্রতিককালে অভিজাত এলাকায় ব্যবহৃত বিভিন্ন মাদকদ্রব্যের উৎস অনুসন্ধানে তৎপর হয়ে গোপন তথ্যের ভিত্তি তে ইতোপূর্বে এলএসডি-আইসসহ বিভিন্ন মাদক উদ্ধার করেছে।
গত মাসে এমন একটি সিন্ডিকেটের তথ্য হাতে আসলে বনানী-বারিধারা-গুলশান এলাকায় অভিযান চালানো হয় এবং ৬১ গ্রাম আইসসহ এই চক্রের ৭ জনকে গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনা হয়। তাদের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে এবং তথ্য-প্রযুক্তির সাহায্যে এই মাদক পাচার চক্রের মূল হোতা চন্দন রায় (২৬) এর অবস্থান শনাক্ত করা হয় এবং অভিযান পরিচালনা করা হয়।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে চন্দন জানায়, ডিগ্রি পাস করে কেমিক্যাল কোম্পানিতে চাকরিরত অবস্থায় বিভিন্ন অপরাধমূলক কাজে জড়িয়ে পড়ে।
পরে চাকরি ছেড়ে লাগেজ পার্টির সদস্য হয়ে বিদেশ থেকে স্বর্ণ ও ইলেকট্রনিকস সামগ্রী পাচারের কাজে জড়ায়। করোনাকালীন সময়ে মালয়েশিয়ায় থাকা তার আত্মীয় শংকর বিশ্বাস এবং নোয়াখালী এলাকার জনৈক হাবিব এর মাধ্যমে আইস (ক্রিস্টাল মেথ) মাদক পাচার চক্র গড়ে তোলে।
ইতোপূর্বে মালয়েশিয়া থেকে সোনা ব্যবসার আড়ালে আইস পাচারকালে ২০২০ সালের নভেম্বর মাসে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) রমনা বিভাগের হাতে ৬০০ গ্রাম আইস ও ৫ (পাঁচ)জন সহযোগীসহ গ্রেপ্তার হয়। পরে ২০২২ এর ফেব্রুয়ারিতে জামিনে বের হয়ে পুনরায় সক্রিয় হয়।
গ্রেপ্তারকৃত চন্দন জানায়, অত্যন্ত উচ্চমূল্যের মাদক আইস (ক্রিস্টাল মেথ) বাংলাদেশে সহজলভ্য না হওয়ায় অভিজাত এলাকার তরুণ-তরুণীদের কাছে ‘পার্সেল হোম সার্ভিস’ এর মাধ্যমে আইস (ক্রিস্টাল মেথ) নিয়মিত বিক্রি করতো। এসব এলাকার বিভিন্ন পার্টিতে নিয়মিত আইস (ক্রিস্টাল মেথ) সরবরাহ করত।
অত্যন্ত উচ্চমূল্যের মাদক আইস (ক্রিস্টাল মেথ) এর প্রতি গ্রাম সেবনকারী পর্যায়ে ৫০০০ টাকা। টেকনাফ থেকে চট্টগ্রাম হয়ে ঢাকায় পৌঁছাতে প্রতি কেজির মূল্য দাঁড়ায় ৩০-৩৫ লক্ষ টাকা।
গ্রেপ্তারকৃত চন্দন রায় (২৬) এর বিরুদ্ধে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন, ২০১৮ (সংশোধিত ২০২০) এর সংশ্লিষ্ট ধারায় ওয়ারী থানায় নিয়মিত মামলা দায়েরের প্রক্রিয়া চলমান।
এই অপরাধের সর্বনিম্ন সাজা যাবজ্জীবন কারাদন্ড এবং সর্বোচ্চ সাজা মৃত্যুদন্ড। আসামীকে জিজ্ঞাসাবাদে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে চক্রের অন্যান্যদের আটক করতে অভিযান চলমান আছে এটা একটা চলমান প্রক্রিয়া ।
আইস (ক্রিস্টাল মেথ) এর সাইকোঅ্যাকটিভ প্রভাব সাংঘাতিক৷ ইয়াবায় সাধারণত ২০ ভাগ অ্যামফিটামিন থাকে। তবে নতুন এই মাদকের শতভাগ অ্যামফিটামিন থাকে। এ জন্য বিশ্বজুড়ে এটি ভয়ংকর মাদক হিসেবে চিহ্নিত। এটি সেবনের পর মানবদেহে অল্প সময়ে তীব্র উত্তেজনা সৃষ্টি করে। দীর্ঘদিন এই মাদক সেবনে মস্তিষ্কের রক্তনালি ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং এ থেকে রক্তক্ষরণ হতে পারে। এটি হৃদযন্ত্র, কিডনি ও লিভারেরও ভয়াবহ ক্ষতি করে। তারা বিকৃত যৌনাচারে লিপ্ত হয়ে ওঠে। স্বভাব হয়ে যায় হিংস্র। বিরূপ প্রতিক্রিয়ায় দ্রুত ওজন কমে যায় এবং অল্প সময়ের মধ্যে বার্ধক্য ভর করে। কোনও কোনও ক্ষেত্রে কয়েক মাসের মধ্যেই আত্মহত্যা বা মৃত্যুর পর্যায়ে ঘটে।