একাত্তরের ঈদ ও ১৯৭১ ফ্রন্টলাইনের সেরা অপারেশন

Uncategorized জাতীয় জীবনী বিশেষ প্রতিবেদন

সারতাজ আলীম : ২০ নভেম্বর, ১৯৭১, ঈদের দিন। একাত্তরের ঈদ এসেছিল নভেম্বরে। সিলেটের তামাবিল-ডাউকি সীমান্তবর্তী এলাকার রণাঙ্গন ভয়াবহ উত্তপ্ত। ৫ তারিখ থেকে প্রতিদিনই হামলা-পাল্টা হামলা চলছে। ৩ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের ডেল্টা, ইকো এবং ব্যাটালিয়ন হেড কোয়ার্টার কোম্পানির মুখোমুখি পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ৩১ পাঞ্জাব রেজিমেন্ট। রাধানগর ঘিরে বিস্তীর্ণ এলাকায় জালের মত ছড়িয়ে আছে শত্রুদের বাংকার। এমন শক্ত ডিফেন্স ভাঙতে পারছিল না মুক্তিবাহিনী। থেমে থেমে যুদ্ধ চলছিল। দাবা খেলার মত আগপিছ চলছে। এক মুহূর্ত বিশ্রামের সময় নেই মুক্তিবাহিনীর! যুদ্ধে প্রতিদিনই একই রুটিন। এক হাইড আউট থেকে আরেক হাইড আউট!


বিজ্ঞাপন

মুক্তিবাহিনী ভেবেছিল ঈদের দিন অন্তত পা*কিরা শেলিং বন্ধ রাখবে। কিন্তু সেই আশায় গুঁড়ে বালি। সকাল থেকেই ভয়াবহ শেলিং শুরু করে পাকিরা। কোন পজিশনের যোদ্ধারাই ঈদের নামাজ পড়ার সুযোগ পান না। গোসল, নতুন জামা বা সুজি-মিষ্টিরও কোন সুযোগ ছিল না। তবে দুপুরে দূরবর্তী গ্রাম থেকে স্বেচ্ছাসেবকরা কিছুটা ভালো-চাল ডালের খিচুড়ি নিয়ে এসেছিল। ভয়ানক গোলাগুলির মধ্যে মুক্তিযোদ্ধারা অমৃত স্বাদের খুঁজে পান তাতে!
২৬শে নভেম্বর ভারতীয় গোর্খা রেজিমেন্ট রাধানগর আক্রমণ করে এবং পা*কিদের পাল্টা হামলায় ব্যাপক হতাহত হয়ে পিছু হটে। পরে মুক্তিবাহিনী দুর্দান্ত সাহস দেখিয়ে শেষ পর্যন্ত ২৯-৩০ নভেম্বের রাধানগর দখলে নেয়। সে ঘটনা আরেকদিনের জন্য থাক……

এদিকে চাঁদ রাতে কুড়িগ্রামের রায়গঞ্জে পাকবাহিনীর ঘাঁটি দখলে দুটি মুক্তি কম্যান্ডো দল রওনা দেয়। একটা দলের নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন লেঃ সামাদ। কিন্তু পাকবাহিনীর ফাঁদে পড়ে তারা। ১৬জন মুক্তিযোদ্ধা প্রায় ১ ব্যাটালিয়ন সেনার বিরুদ্ধে এক অসম যুদ্ধ শুরু করেন। ঈদের দিন সকাল অব্দি নিজেদের রক্ত দিয়ে ঠেকিয়ে রাখেন পাকবাহিনীকে। পরে সীমান্তের ওপার থেকে মিত্রবাহিনীর আর্টিলারি সাপোর্ট এগিয়ে আসে মুক্তিবাহিনীর রিইনফোর্সমেন্ট। মাত্র ২জনকে জীবিত উদ্ধার হন।
সকালে রাজাকাররা গুজব রটিয়ে দেয় লে. সামাদদের জানাজা পড়ালে ওই ইমামের কপালে দুঃখ আছে। আফসোস সেদিন কেউ এগিয়ে আসে না তার জানাজা পড়াতে। পরে ভারত থেকে একজন ইমাম এসে তাদের জানাজা পড়ান।

ঢাকার ধানমন্ডির বাসিন্দা ফারুক ওয়াহিদ যুদ্ধ করছিলেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুরের চরাঞ্চলে, সেলাইবিহীন একটা লুঙ্গি পড়ে ঈদের দিন তিনি মনে করছিলেন মায়ের নির্দেশ, ‘যুদ্ধ শেষ না করে ঘরে ফেরা যাবে না’।

৩ নং সেক্টরের অন্তর্ভুক্ত মুকুন্দপুরে ২ ইস্ট বেঙ্গল আক্রমণ করে। ১১ ইস্ট বেঙ্গল থেকে ২০০টি ৮১মিমি মর্টারের গোলা পাঠানো হয় সেখানে, বিকালে আত্মসমর্পণ করে ৩১ শত্রু সেনা।

অনেক ক্যাম্পে যোদ্ধাদের এক টুকরো করে মাংস দেয়া হয়। চাল-ডালের খিচুড়ি খেতে খেতে হঠাৎ একদিন মাংস আসায় অনেকেই অবাক হয়ে যান। পরে তাদের জানানো হয় আজ ঈদের দিন। যুদ্ধে প্রতিদিনই একই রুটিন, একই কাজ। ফ্রন্টলাইনের যোদ্ধারা প্রায়ই দিন-তারিখের হিসাব রাখার সুযোগ পান না!

আরামবাগে শিল্পী হাশেম খান জামাতে গিয়ে হাজির হন। মোনাজাতে ইমাম সাহেব পাকিস্তানের কল্যাণ কামনা করে এবং পাক সেনাবাহিনীর গুণকীর্তন করে দোয়া চাইলেন খোদার কাছে। হাশেম খানের মনে হলো, সে দোয়ায় ইমাম সাহেবের অন্তরের সায় কতখানি সেটা প্রশ্নসাপেক্ষ।

ফ্রন্টলাইনের ক্যাম্পগুলোতে দুভাগ হয়ে জামাত হয়। হিন্দু সহযোদ্ধাদের পাহারায় অনেক ক্যাম্পে মুসলিম যোদ্ধারা জামাতে নামাজ পড়েন। তাদের সবার প্রার্থনা তখন একটাই……… “বাংলাদেশে”

( তথ্য সূত্র : ডিফেন্স রিসার্চ ফোরাম : ১৯৭১ ফ্রন্টলাইনের সেরা অপারেশন,  ফেসবুক থেকে নেওয়া)


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *