নেত্রকোনায় চাঞ্চল্যকর ১২ বছরের শিশু নয়ন হত্যার আসামী গ্রেফতার ও হত্যায় ব্যবহৃত অস্ত্র উদ্ধার করলো  পিবিআই

Uncategorized অপরাধ আইন ও আদালত জাতীয় বিশেষ প্রতিবেদন সারাদেশ

নিজস্ব প্রতিবেদক : পিবিআই, নেত্রকোণা টিম কেন্দুয়া থানার অন্তর্গত পানগাঁও গ্রামের ১২ বছরের শিশু নয়ন হত্যার সাথে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত আসামী গ্রেফতার এবং একই গ্রামের প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পিছনে মাটির নিচে পুঁতে রাখা সাড়ে ১১ ইঞ্চি লম্বা আকৃতির মরিচা ধরা ছুরি উদ্ধার করে। গ্রেফতারকৃত আসামীর নাম মোঃ আসাদুজ্জামান @আসাদ (৩০), পিতামৃত-রহিম উদ্দিন, সাং- পানগাঁও, থানা-কেন্দুয়া, জেলা-নেত্রকোণা।


বিজ্ঞাপন

গত ৭ই নভেম্বর/২০২২ সালে  ভোরে ডিসিস্ট নয়ন সারারাত নিখোঁজের পর তার মরদেহ পানগাঁও গ্রামের জনৈক মঞ্জু মিয়ার নির্মানাধীন বাড়ির সামনে থেকে কেন্দুয়া থানা পুলিশ উদ্ধার করে। ০৯/১১/২০২২ সালে নয়নের বাবা আব্দুল ওয়াদুদ বাদী হয়ে ৪ জনকে এজাহারভুক্ত করে মামলা দায়ের করেন।


বিজ্ঞাপন

কেন্দুয়া থানার মামলা নং-১৬, তারিখ-০৯/১১/২০২২, কেন্দুয়া থানা পুলিশ তিন মাস মামলা তদন্তের পর পিবিআই, নেত্রকোণা জেলা মামলাটি স্ব-উদ্যোগে তদন্তভার গ্রহণ করে। পিবিআই, নেত্রকোণা জেলা নয়ন হত্যার পর হতেই এবং মরদেহের পাশে সুপারির ঝোপা দেখে পিবিআই, নেত্রকোণা জেলা সন্দেহ পোষন করে যে, মামলাটি প্রকৃত হত্যাকারীদের আড়াল করার জন্য এবং এজাহারভুক্ত আসামীদের পূর্ব শত্রুতার কারনে ফাঁসানোর জন্য এজাহার দাখিল করা হয়েছে।

চলতি বছরের ১লা ফেব্রুয়ারী  পিবিআই এর মামলাটি তদন্তভার পাওয়ার পাওয়ার পরই অতিরিক্ত আইজিপি  বনজ কুমার মজুমদার বিপিএম (বার), পিপিএম এর সঠিক সঠিক তত্ত্ববধান ও দিক নির্দেশনায়, পিবিআই, নেত্রকোণা জেলার ইউনিট ইনচার্জ, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শাহীনুর কবিরের সার্বিক সহযোগিতায় মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা প্রথমে এসআই আশরাফুল হাসান ও পরবর্তীতে পুলিশ পরিদর্শক মোঃ ইমদাদুল বাশার প্রকৃত হত্যাকারীদের সনাক্ত ও গ্রেফতারের জন্য তথ্য প্রযুক্তি এবং গোপন সোর্সের মাধ্যমে তদন্ত কার্য করতে থাকেন।

তদন্তে দেখা যায় যে, এজাহারভুক্ত আসামীদের সাথে একই গ্রামের একটা পক্ষের সাথে ২০১৭ সালের রহিমা নামক মহিলার হত্যা মামলার দ্বন্দ রয়েছে। উক্ত পক্ষ পূর্বের হত্যা মামলার আসামী হওয়ায় এবং দীর্ঘদিন হয়রানির শিকার হওয়ায় ক্ষোভে শিশু নয়ন হত্যায় জড়িয়ে যায় এবং মামলাটি ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার চেস্টা করে।

এরই ধারাবাহিকতায় চলতি বছরের  ২৪ মার্চ,  ২০১৭ সালের হত্যা মামলার ১নং আসামী মোঃ শামছুল হককে গ্রেফতার করলে তিনি নয়ন হত্যার সাথে গ্রেফতার কৃত  আসামী  আসাদুজ্জামান (৩০) ও পলাতক আসামী,  জজ মিয়া (৩৪), এবং  আব্দুল কুদ্দুস (৪০) দের জড়িত থাকার বিষযে স্বীকার করেন।

তারা তাকে প্রস্তাব দেন যে শিশু নয়নকে হত্যা করলে তারা প্রতিশোধ নিতে পারবে। এছাড়া একজন সাক্ষীর আদালতে ১৬৪ ধারায় বিবৃতিতে উক্ত তিনজনসহ বাদীর ভাই সবুজ মিয়া (৪৫) ও নুরুল হক (৫০) এর হত্যার সাথে সম্পৃক্ততার কথা বলেন।

তারা সবাই ২০১৭ সালের রহিমা হত্যা মামলার এজাহারভুক্ত আসামী ছিলেন এবং নয়ন হত্যা মামলা পিবিআই তদন্তভার গ্রহনের পর থেকে পলাতক ছিলেন। গত ১৪ তারিখে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে পলাতক সন্দেহভাজন আসামী আসাদুজ্জামান তার গ্রামে গভীর রাতে আসলে পিবিআই এর একটি চৌকস দল তাকে গ্রেফতার করে।

গ্রেফতারের পর তিনি নয়ন হত্যার বিষয়ে গুরুত্বপূর্ন তথ্য দেন এবং গত ১৫ তারিখে ০১ দিনের পুলিশ রিমান্ডে আসার পর হত্যার সাথে জড়িত থাকার কথা পিবিআই, নেত্রকোণা জেলার কাছে স্বীকার করেন এবং তার দেখানো মতো জায়গা থেকে ৮ মাস আগে পুঁতে রাখা মরিচা ধরা ছোরা উদ্ধার করা হয় গতকাল শুক্রবার  ১৬ জুন,  ভোর বেলায় পানগাঁও প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পিছনের জঙ্গল থেকে।

অস্ত্র উদ্ধারের পর গতকাল তাকে আদলতে প্রেরন করা হয়। গ্রেফতারকৃত আসামী আসাদুজ্জামান ২০১৭ সালের হত্যা মামলার এজাহারভুক্ত আসামী নূরুল হক এবং জজ মিয়ার শ্যালক এবং নয়ন হত্যা মামলার এজাহারভুক্ত ১নং আসামী মোজাহিদের বাবা সবুজ মেম্বারের সৎ ভাই। সবুজ মেম্বারের সাথে ৩০ শতাংশ জায়গা নিয়ে তার দ্বন্দ্ব।

তাই তিনি তার ভগ্নিপতি নুরুল হক ও জজ মিয়াদের পক্ষে কাজও করেন এবং উক্ত জমির দ্বন্দ্বের জন্য এ হত্যায় জড়িয়ে যান। শিশু নয়ন (১২) হত্যার সাথে জড়িত অন্যান্য আসমীদের গ্রেফতারের চেস্টা অব্যাহত রয়েছে।

পিবিআই, নেত্রকোণা জেলা ইনচার্জ অতিরিক্ত পুলিশ সুপার  শাহীনুর কবির বলেন শিশু নয়ন হত্যা একটি চাঞ্চল্যকর ঘটনা। প্রকৃত হত্যাকারীদের সনাক্ত এবং তাদের বিচারের আওতায় আনার জন্য পিবিআই একটি চ্যালেঞ্জ হিসেবে গ্রহণ করে। অপরাধীরা গভীর রাতে শিশু নয়নের শরীরে ১৭ টা আঘাত করে পায়ের রগ কেটে পরিকল্পিতভাবে খুন করে ঘটনাকে অন্য দিকে প্রবাহিত করার উদ্দেশ্যে এজাহারভুক্ত আসামীদের বাড়ীর অদূরে রেখে দেয় এবং মরদেহের পাশে সুপারির ঝোপা রেখে দেয়। এখানে উল্লেখ্য যে এজাহারভুক্ত ১নং আসামী ১০ম শ্রেণীতে পড়ুয়া ছাত্র মোজাহিদ তাদের গাছে সুপারি পাড়াকে কেন্দ্র করে নয়নকে বলেছিল যে আর কোনদিন সুপারি পাড়তে আসলে তার পায়ের রগ কেটে পাশের সুপারির ঝোপে রাখবে। মূলত এই হুমকিকেই অপরাধীরা ঢাল হিসেবে ব্যবহার করতে চেয়েছিল।

বাদী ডিসিস্ট নয়নের বাবা আব্দুল ওয়াদুদ ও তার স্ত্রী অত্যন্ত সহজ সরল প্রকৃতির। আব্দুল ওয়াদুদের নিজের ভাই সবুজ মিয়াসহ তৃতীয় স্বার্থন্বেষী পক্ষ শিশু নয়নকে হত্যা করে তারা প্রতিশোধ ও ফায়দা লুটে নেওয়ার জন্য বাদীকে বিভিন্নভাবে ভুল বুঝাচ্ছিলেন। এমনকি যে রাতে নয়ন নিখোঁজের কথা বলা হচ্ছিল সে রাতে এজাহারভুক্ত ৪ জন আসামী ডিসিস্ট নয়নকে ডেকে নিয়ে যাওয়ার বিষয়েও শিখিয়ে দেয় এই স্বার্থন্বেষীরা।

পিবিআই তথ্য প্রযুক্তির মাধ্যমে যাদের ডেকে নিয়ে যাওয়ার কথা বলা হচ্ছিল তারা সে রাতে তার বাড়ির আশে পাশেই আসেননি। এমনকি সারারাত শিশু নয়ন নিখোঁজ অথচ তারা কেউ উক্ত চারজনের বাড়িতে একবারও খোঁজ করেননি। এ বিষয়টাও পিবিআই মাথায় রেখে তদন্ত করে এবং মামলার রহস্য উদঘাটনে এতদূর পর্যন্ত আসতে সক্ষম হয়। মামলার অন্যান্য আসামীদের গ্রেফতার চেস্টা ও এ তদন্ত চলমান রয়েছে। খুব তাড়াতাড়ি তদন্ত কার্যক্রম শেষে আদালতে  প্রতিবেদন প্রেরন করা হবে।


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *