নিজস্ব প্রতিনিধি : হাত খরচের টাকা জোগাড় করতে ৩ বন্ধু মিলে চালক মনির হোসেন ওরফে ফয়সাল (১৭)কে খুন করে অটোরিক্সা ছিনতাইয়ের ঘটনায় জড়িত সন্দেহে আসামী আলী আকবর (২২) ও আসামী রাকাত (১৮) গ্রেফতার করেছে পিবিআই, কিশোরগঞ্জ জেলা|

ভিকটিম মনির হোসেন ওরফে ফয়সাল (১৭) কিশোরগঞ্জের বাজিতপুর থানার মজলিশপুর গ্রামের মোঃ সাইফুল ইসলামের ছেলে| সে গত ২৯/১১/২০২২ তারিখ সন্ধ্যা অনুমান ৫ টাভ১০ মিনিটের সময় বাড়ী থেকে ব্যাটারী চালিত অটোরিক্সা নিয়ে ভাড়া মারার জন্য বাইরে যায়।

কিন্তু রাত হয়ে গেলেও বাড়ীতে ফিরে না আসিলে বিভিন্ন জায়গায় খোজাখুজি করিতে থাকে। পরবর্তীতে লোক মুখে শুনতে পারে বাজিতপুর থানাধীন সরারচর বিদ্যুৎ সাবস্টেশনের কাছে তালতলা নামক স্থানে একটি লাশ পাওয়া গেছে। উক্ত সংবাদ পেয়ে ভিকটিমের পিতা ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখতে পায় লাশের গলায় রশিও মাফলার পেচানো ও মুখে রক্ত মাখা| লাশটি তার ছেলে মনির হোসেন ওরফে ফয়সালের মর্মে সনাক্ত করেন|
এই ঘটনায় ভিকটিমের পিতা বাদী হয়ে বাজিতপুর থানার মামলা নং-০১, তারিখ-০১/১২/২০২২, ধারা-৩০২/৩৭৯/৩৪ পেনাল কোড দায়ের কররন|
থানা পুলিশ মামলাটি গত ০১/১২/২২ থেকে ২৩/০৫/২৩ পর্যন্ত তদন্ত করেন। মামলা রুজু হওয়ার পর থেকে পিবিআই, কিশোরগঞ্জ জেলার ক্রাইমসিন টিম ঘটনাস্থল পরিদর্শন করত ছায়া তদন্ত অব্যাহত রাখে। মামলাটি পিবিআইয়ের সিডিউলভুক্ত হওয়ায় পুলিশ হেডকোয়ার্টার্স এর নিদের্শে পিবিআই, কিশোরগঞ্জ জেলা মামলাটির তদন্তভার গ্রহণ করে|
পিবিআই প্রধান বনজ কুমার মজুমদার বিপিএম(বার), পিপিএম এর তত্ত্বাবধানে এবং মোঃ শাহাদাত হোসেন, পিপিএম, পুলিশ সুপার, পিবিআই, কিশোরগঞ্জ জেলা (ইউনিট ইনর্চাজ) এর সার্বিক সহযোগীতায় কিশোরগঞ্জ জেলা বর্ণিত মামলার সন্ধেহভাজন আসামী আলী আকবর (২২), পিতা-ইমতিয়াজ, সাং-পশ্চিম মন্ডলভোগ ব্যাপারী পাড়া, থানা-কটিয়াদী, জেলা-কিশোরগঞ্জকে কটিয়াদী থানাধীন মন্ডলভোগ এলাকা থেকে বুধবার ২১ জুন, দিবাগত রাত ১০ টা .৪৫ মিনিটের সময় এবং সন্দেহভাজন আসামী রাকাত (১৮), পিতা-মৃত আঃ কুদ্দুস, সাং-পূর্ব-কুতুবপুর, থানা-বাজিতপুর, জেলা-কিশোরগঞ্জকে বাজিতপুর থানাধীন পূর্ব-কুতুবপুর এলাকা থেকে গতকাল বৃহস্পতিবার ২২ জুন, ভোর ৬ টা ৪৫ মিনিটের সময় গ্রেফতার করে পিবিআই, কিশোরগঞ্জের একটি টীম।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রফতারকৃত আসামীরা জনায় যে, আসামী আলী আকবর, কাউসার ও রাকাত সমবয়সী ও পরস্পরে সাথে বন্ধুত্ব পূর্ণ সম্পর্ক। আসামী আলী আকবর মাগুরা বাজারে একটি সেলুন দোকান আছে। ওই সেলুনে তিন বন্ধু মিলে পরিকল্পনা করে হাত খরচের করার টাকা নাই, টাকার দরকার তখন তারা একটি অটোরিক্সা ছিনতাই করার পরিকল্পনা করে। পরিকল্পনা মোতাবেক তিন বন্ধু মিলে বাজিতপুর থানাধীন সরারচর বাজারে ওয়াজ শুনতে যায়।
সরারচর বাজার থেকে ওয়াজ শুনে সন্ধ্যা অনুমান ৬ টার দিকে সরারচর বাজার অটোস্ট্যান্ড হতে আসামী কাউসার একটি অটোরিক্সা ২০০ টাকায় ভাড়া করে অটো চালকের ডান পাশে রাকাত ও বাম পাশে আলী আকবর এবং পিছনের ছিটে কাউসার উঠে বলে উজানচরের দিকে যাওয়ার জন্য।
উজানচর যাওয়ার মাঝ পথে পূর্ব-পরিকল্পনা মোতাবেক বাজিতপুর থানাধীন বাংলাবাজার পৌছাইলে আসামীরা ডিসিস্ট অটো চালককে বলে গাড়ি ঘুরাইয়া পুনরায় সরারচরের দিকে যাওয়ার জন্য।
পূর্ব-পরিকল্পনা মোতাবেক আসামীগন বাজিতপুর থানাধীন সরারচর বিদ্যুৎ সাবস্টেশনের কাছে তালতলা নামক স্থানে আসা মাত্রই পিছন থেকে কাউছারের সাথে থাকা রশি দিয়ে ডিসিস্ট অটোচালক মনির হোসেনের গলায় রশি দিয়ে পেচিয়ে টাইট করে ধরে রাখে। একপর্যায়ে অটো চালকের মৃত্যু নিশ্চিত করে।
তিন বন্ধু মিলে তাল তলার নীচে রাস্তার ঢালে অটো চালককে ফেলে দিয়ে আসামী রাকাত অটো চালিয়ে নিয়া ব্রাহ্মন গাঁও নয়াবাজারে শেষ মাথার ডান পাশে একটি গ্যারেজে ছিনতাইকৃত অটো গাড়িটি রাতে চার্জে দিয়া আসামীরা যার যার মত বাড়িতে চলে যায়।
পরের দিন আসামী আলী আকবর, কাউসার ও রাকাত উক্ত গ্যারেজ হতে ছিনতাইকৃত অটো রিক্সা নিয়া বাজিতপুর থানাধীন দুম্মাপুর এলাকায় এডভোকেট মার্কেটের সাদ্দাম ভাঙ্গারী দোকানে উক্ত ছিনতাইকৃত অটোটি ১,৫০০ টাকায় বিক্রি করিয়া তিন জন প্রত্যেকে সমপরিমান ভাগে ভাগ ৪০০ টাকা করে নেয় এবং বাকি ৩০০ টাকা গাড়ি ভাড়া ও খাওয়ার বাবদ খরচ করে। হত্যা কান্ডের সময় অটো চালকের কাছ হতে ছিনতাই করা মোবাইলটি আসামী আলী আকবর ভাগে পায়।
আসামী আলী আকবর মোবাইলটি নিয়ে জুয়া খেলার মাঠে পূর্বে উক্ত মামলায় গ্রেফতারকৃত আসামী হৃদয়, পিতা- রহিম এর নিকট ৩০০ টাকার বিনিময়ে বিক্রি করে। র্যাব ও থানা পুলিশ উক্ত মোবাইলটি উদ্ধার পূর্বক জব্দ করে ।
আসামী আলী আকবর (২২) ও আসামী রাকাত (১৮) কে রাশেদুল আমিন, জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট, কিশোরগঞ্জ এর আদালতে হাজির করলে আসামীরা নিজেদের জড়িয়ে ৩ জনের নাম উল্লেখ করে। গতকাল বৃহস্পতিবার ২২ জুন, ডিসিস্ট মনির হোসেন ওরফে ফয়সাল (১৭) কে হত্যা করেছে বলে ফৌঃকাঃবিঃ ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেয়। তদন্তে প্রাপ্ত আসামী গ্রেফতারের জন্য অভিযান অব্যাহত আছে।