ফের বাড়ল মৃত্যু-শনাক্ত

এইমাত্র জাতীয় জীবন-যাপন সারাদেশ স্বাস্থ্য

ঈদের পর সংক্রমণ-মৃত্যু বেড়ে যাওয়ার শঙ্কা


বিজ্ঞাপন

 

বিশেষ প্রতিবেদক : মহামারি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে আরও ২১০ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে এখন পর্যন্ত দেশে মোট মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৭ হাজার ৫২জনে।
এছাড়া গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে করোনা শনাক্ত হয়েছেন ১২ হাজার ৩৮৩ জন। এ নিয়ে দেশে মোট করোনা শনাক্তের সংখ্যা দাঁড়াল ১০ লাখ ৫৯ হাজার ৫৩৮ জনে। বুধবার বিকেলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও জানানো হয়, গত ২৪ ঘণ্টায় সুস্থ হয়েছেন ৮ হাজার ২৪৫ জন। এ নিয়ে মোট সুস্থ হয়েছেন ৮ লাখ ৯৭ হাজার ৪১২ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় ৪২ হাজার ৪৯০ জনের নমুনা পরীক্ষায় শনাক্তের হার ২৯ দশমিক ১৪ শতাংশ।
এর আগে গত মঙ্গলবার (১৩ জুলাই) ২০৩ জনের মৃত্যু হয় এবং করোনা শনাক্ত হয় ১২ হাজার ১৯৮ জনের।
এ ছাড়া গত ১২ জুলাই দেশে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ২২০ করোনায় মারা যান। ১১ জুলাই দেশে সর্বোচ্চ ২৩০ জন মারা যান। ১০ জুলাই ১৮৫ জন, ৯ জুলাই ২১২, ৮ জুলাই ১৯৯ জন, ৭ জুলাই ২০১ জন, ৬ জুলাই ১৬৩ জন, ৫ জুলাই ১৬৪ জন, ৪ জুলাই ১৫৩ জন, ৩ জুলাই ১৩৪ জন, ২ জুলাই ১৩২ এবং ১ জুলাই ১৪৩ জন করোনায় মৃত্যুবরণ করেন।
এদিকে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ও প্রাণহানির পরিসংখ্যান রাখা ওয়েবসাইট ওয়ার্ল্ডওমিটারের তথ্যানুযায়ী, বুধবার সকাল ৮টা পর্যন্ত আগের ২৪ ঘণ্টায় বিশ্বে মারা গেছেন আরও ৮ হাজার ১০১ জন এবং আক্রান্ত হয়েছেন ৫ লাখ ৮ হাজার ১২১ জন। এ নিয়ে বিশ্বে এখন পর্যন্ত মোট করোনায় মৃত্যু হয় ৪০ লাখ ৬৫ হাজার ৩২৪ জনের এবং আক্রান্ত হয়েছেন ১৮ কোটি ৮৫ লাখ ৭৪ হাজার ৯৪৩ জন। এদের মধ্যে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ১৭ কোটি ২৪ লাখ ৬ হাজার ২৬৩ জন।
করোনায় এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি সংক্রমণ ও মৃত্যু হয়েছে বিশ্বের ক্ষমতাধর দেশ যুক্তরাষ্ট্রে। তালিকায় শীর্ষে থাকা দেশটিতে এখন পর্যন্ত করোনা সংক্রমিত হয়েছেন ৩ কোটি ৪৮ লাখ ৭ হাজার ৪১৩ জন। মৃত্যু হয়েছে ৬ লাখ ২৩ হাজার ৪৩৫ জনের।
আক্রান্তে দ্বিতীয় ও মৃত্যুতে তৃতীয় অবস্থানে থাকা ভারতে এখন পর্যন্ত মোট সংক্রমিত হয়েছেন ৩ কোটি ৯৪ লাখ ৪ হাজার ৯৪৯ জন এবং এখন পর্যন্ত মোট মৃত্যু হয়েছে ৪ লাখ ১১ হাজার ৪৩৯ জনের।
আক্রান্তে তৃতীয় এবং মৃত্যুতে দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা ব্রাজিলে এখন পর্যন্ত করোনায় এক কোটি ৯১ লাখ ৫২ হাজার ৬৫ জন সংক্রমিত হয়েছেন। মৃত্যু হয়েছে ৫ লাখ ৩৫ হাজার ৯২৪ জনের।
আক্রান্তের দিক থেকে চতুর্থ স্থানে রয়েছে রাশিয়া। দেশটিতে এখন পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ৫৮ লাখ ৩৩ হাজার ১৭৫ জন। মারা গেছেন এক লাখ ৪৪ হাজার ৪৯২ জন।
এ তালিকায় পঞ্চম স্থানে রয়েছে ফ্রান্স। দেশটিতে এখন পর্যন্ত করোনায় সংক্রমিত হয়েছেন ৫৮ লাখ ২০ হাজার ৮৪৯ জন। এর মধ্যে মারা গেছেন এক লাখ ১১ হাজার ৪০৭ জন।
এদিকে আক্রান্তের তালিকায় তুরস্ক ষষ্ঠ, যুক্তরাজ্য সপ্তম, আর্জেন্টিনা অষ্টম, কলম্বিয়া নবম ও ইতালি দশম স্থানে রয়েছে। এই তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান ২৯তম।
২০১৯ সালের ডিসেম্বরের শেষ দিকে চীনের হুবেই প্রদেশের উহান থেকে করোনাভাইরাস সংক্রমণ শুরু হয়। এখন পর্যন্ত বাংলাদেশসহ বিশ্বের ২১৮টি দেশ ও অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়েছে কোভিড-১৯।
ঈদের পর সংক্রমণ-মৃত্যু বেড়ে যাওয়ার শঙ্কা স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের : করোনা সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে কঠোর বিধিনিষেধ শিথিল করায় ঈদ পরবর্তী সময়ে সংক্রমণ ও মৃত্যু বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা করছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। বুধবার দুপুরে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মুখপাত্র ও লাইন ডিরেক্টর অধ্যাপক ডা. রোবেদ আমিন এ আশঙ্কার কথা জানান।
তিনি বলেন, ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে ১৫ থেকে ২২ জুলাই পর্যন্ত আটদিন বিধিনিষেধ শিথিল করা হয়েছে। কিন্তু আমরা যারা স্বাস্থ্য অধিদপ্তর এবং স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে আছি, বিধিনিষেধ শিথিল হলে সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা করি। কিন্তু সরকার যে নির্দেশনাই দেয়, আমাদের সেটা মানতে হবে। এ জন্য ব্যক্তিগত স্বাস্থ্যবিধির প্রতিই আপাতত নজর দিচ্ছি।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মুখপাত্র আরও বলেন, ঈদকে কেন্দ্র করে শপিং মল, পশুর হাট যদি খোলা রাখা হয়, সেক্ষেত্রে সংক্রমণ বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে। তাই সেগুলোতে সর্বোচ্চ স্বাস্থ্যবিধি এবং শতভাগ মাস্ক পরিধান নিশ্চিত করার আহ্বান জানাই। আমরা জানতে পেরেছি বিধিনিষেধ শিথিলের মধ্যে পরিবহনও খুলে দেওয়া হবে, কিন্তু সেখানে যদি যাত্রী অর্ধেক না করা হয়, তাহলেও সংক্রমণ কমবে না, বরং লাফিয়ে বাড়বে । তিনি আরও বলেন, কোরবানির হাট ১৭ জুলাই থেকে ২১ জুলাই পর্যন্ত চলবে। কিন্তু পশুর হাটে যদি মানুষের মধ্যে সামাজিক দূরত্ব না থাকে এবং মাস্ক ব্যবহার না হয়, তাহলে সংক্রমণ যে কারো থেকেই ছড়িয়ে যেতে পারে।
ডা. রোবেদ আমিন বলেন, বিধিনিষেধ শিথিল করা হোক বা না হোক, যদি স্বাস্থ্যবিধি ঠিকমতো মেনে চলা হয়, তাহলে আশা করছি সংক্রমণ এতোটা ছড়াতে পারবে না। কিন্তু আমরা দেখেছি স্বাস্থ্যবিধি সেভাবে মানা হচ্ছে না। এ ভাবে যদি চলতে থাকে, আমরা ভাবছি ঈদ পরবর্তী সময়ে সংক্রমণ এবং মৃত্যুর হার বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি। তবে সরকার জানিয়েছে, সংক্রমণ প্রতিরোধে ঈদের পরপরই সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী আবারও দুই সপ্তাহের বিধিনিষেধ জারি করা হবে।