গরুবাহী ট্রাক ও ব্যবসায়ীদের টার্গেট ভুয়া ডিবি’র

অপরাধ এইমাত্র

অস্ত্র ও পুলিশি সরঞ্জামসহ ভুয়া ডিবি পরিচয়দানকারী ৪ জন গ্রেফতার


বিজ্ঞাপন

বিশেষ প্রতিবেদক : আসন্ন ঈদ-উল আযহাকে সামনে রেখে আবারো ভুয়া গোয়েন্দা পুলিশ পরিচয়দানকারীচক্র মাঠে নেমেছে। চক্রের সদস্যরা গরুবাহী ট্রাক ছিনতাইয়ের পর ব্যবসায়ীদের জিম্মি লাখ লাখ টাকা লুটের চেস্টায় লিপ্ত হয়েছে।
জানা গেছে, ভুয়া ডিবি পুলিশের কয়েকটি গ্রুপ সাদা পোষাকে বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। কে আসল ডিবি, আর কে ভুয়া তা বোঝার উপায় নেই। এদের চুলের কাটিং, চলন-বলন, হাতে ওয়াকিটকিও থাকছে ভুয়া ডিবি’র হাতে। রাজধানীসহ বিভিন্ন এলাকায় ছিনতাই, অপহরণ, ডাকাতিসহ নানা অপরাধ করেই যাচ্ছে। ছাত্র-শিক্ষক, ব্যবসায়ীসহ বিভিন্ন শ্রেনী পেশার মানুষ কেহই রেহাই পাচ্ছে না এদের হাত থেকে ।
গোয়েন্দা সুত্র জানায়, প্রতারকচক্রের সদস্যরা পুলিশের ছদ্মবেশ ধারণ করে রাজধানী ও আশেপাশের জেলার মহা-সড়কে রাতের বেলায় আসল পুলিশের মত চেকপোস্ট বসিয়ে বিভিন্ন যানবাহনে তল্লাশী চালায়। এসময় তাদের হাতে ওয়াকিটকি, গায়ে ডিবি পুলিশের জ্যাকেট থাকে, আর হাতে সিগনাল লাইট। তারা গাড়ি থামিয়ে তল্লাশীর নামে ডাকাতি করছে।
শুধু তাইন নয়, চক্রের সদস্যরা নগরীল বিভিন্ন ব্যাংকের সামনে সোর্স নিযুক্ত করে। তারা বিভিন্ন ব্যাংকের আশপাশে ওঁতপেতে থাকেন। কোনো ব্যক্তি ব্যাংক থেকে বিপুল পরিমাণ টাকা উত্তোলনের পর গাড়ি যোগে গন্তব্যে রওনা হন। পরে ওই সোর্স সেই তথ্য প্রদান করলে ডিবি পুলিশ পরিচয়ে উক্ত টাকা পরিবহনকারী ব্যক্তিকে গাড়ীতে তুলে নিয়ে তার চোখ বাঁধা হয়। পরে তাকে নিয়ে রাজধানীর বাইরে নির্জন এলাকায় নিয়ে তার হাত-পা বেধে রাস্তায় ফেলে টাকাগুলো লুট করে নেয়।
অপর সূত্র জানায়, রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় এই ভুয়া ডিবির প্রতারণার সোর্স ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। এদের সঙ্গে সাবেক আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য ছাড়াও কর্মরত পুলিশের এক শ্রেণির সদস্যও জড়িত। শুধু তাই নয়, তারা ধনাঢ্য ব্যবসায়ী শিল্পপতির প্রতিষ্ঠানে চুক্তি ও কমিশনের ভিত্তিতে সোর্স নিযুক্ত রয়েছে। কোথাও থেকে কোনো শিল্পপতি বা ব্যবসায়ীর মোটা অঙ্কের টাকা নিয়ে ব্যাংকে বা কোথাও লেনদেন করতে গেলেই ওই সোর্সরা ভুয়া ডিবির প্রতারক টিমের সদস্যদের কাছে তথ্য পাচার করে। এই চক্রের সঙ্গে বিভিন্ন এলাকার রেন্ট-এ-কারের মালিক ও চালকরাও জড়িত রয়েছে। রেন্ট-এ-কারের গাড়ি এ ধরনের অপহরণ ও ছিনতাইয়ের কাজে ভাড়া দেয়া হয়ে থাকে বেশি।
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের একটি দর গোপন সংবাদের বিত্তিতে অভিযান চালিয়ে অস্ত্র ও পুলিশি সরঞ্জামসহ ভুয়া ডিবি পরিচয়দানকারী ৪জন গ্রেফতার করেছে। গ্রেফতারকৃতরা হলেন, মোঃ জাহিদ হাসান ওরফে রেজাউল, মোঃ মানিক বেপারী ওরফে দারোগা মানিক, মোঃ ফারুক হোসেন ওরফে নাসির উদ্দিন ও মোঃ রুবেল সিকদার ওরফে রুস্তম।
জানা গেছে, মঙ্গলবার দিবাগত সন্ধ্যায় রাজধানীর বসিলা এলাকায় ডিবি পরিচয়ে অস্ত্র ও পুলিশের সরঞ্জামসহ ডিবির জ্যাকেট পরিহিত অবস্থায় চেকপোস্টের মাধ্যমে ডাকাতি করার সময় চারজনকে গ্রেফতার করে। এসময় তাদের কাছ থেকে ১ টি বন্দুক, ১ টি চাপাতি, ২ টি ছোরা, ৩ টি ডিবি লেখা জ্যাকেট, ১টি খেলনা পিস্তল ও কভার, ১টি ওয়্যারলেস সেট, ১টি রেন্চ, ১ জোড়া হ্যান্ডকাফ, ১ টি স্টিলের বাঁশি ও নগদ ১লক্ষ ৮০ হাজার টাকা উদ্ধার করা হয়।
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের যুগ্ম পুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ জানান, গ্রেফতারকৃতরা সংঘবদ্ধ আন্তঃনগর ডাকাত দলের সদস্য। আসন্ন ঈদ-উল-আযহাকে সামনে রেখে পশুর হাটের গরু বেপারী ও ক্রেতাদের ডাকাতির পরিকল্পনা করছিলো। তারা ডিবি পুলিশের ছদ্মবেশে বিভিন্ন সড়কে রাতে চেকপোস্ট বসিয়ে ডাকাতির চেষ্টা করত। আবার বিভিন্ন ব্যাংক থেকে টাকা তোলার পর তাকে টার্গেট করে অপরহরণ করে টাকা ছিনিয়ে নিত। এদের নামে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় মামলা রয়েছে। আর বিভিন্ন মামলায় গ্রেফতার হয়ে জেলও খেটেছে।
এর আগে ২০১৯ সালের অক্টোবরের শেষে শুক্রবার সন্ধ্যায় বাইতুল মোকাররম মসজিদের দক্ষিণ গেটের পাশে হামদর্দের শোরুমের সামনে এক্সপোর্ট-ইমপোর্ট ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানের ৯৫ লাখ টাকা ডিবি পরিচয়ে ছিনতাইয়ের চেষ্টা করে। তখন সোহাগ গাজি নামে একজনকে হকাররা আটকের পর গণপিটুনি দিয়ে পুলিশে সোপর্দ করেছে। এ ঘটনায় ব্যবসায়ী হান্নান পল্টন থানায় মামলা করা হয়েছে। ঘটনার পরই পুলিশ ও র‌্যাব অভিযান চালিয়ে ২৫ লাখ ৮৯ হাজার টাকা উদ্ধারে।
তার আগে মতিঝিলে মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবের সামনে এক যুবকের কাছ থেকে ১০ লাখ টাকা ছিনতাইয়ের সময় বংশাল থানার এক কনস্টেবলসহ দুইজনকে পিটুনি দেয় পথচারীরা। পরে তাদের মতিঝিল থানা সোপর্দ করা হয়। ভুক্তভোগী কামাল যমুনা ব্যাংকের মতিঝিল শাখা থেকে ১০ লাখ টাকা তুলে নিয়ে যাওয়ার সময় পুলিশ পরিচয়ে টাকাগুলোসহ তাকে তুলে নেয়ার সময় আটক হন।তার মোটরসাইকেলের সামনে ‘পুলিশ’ লেখা ছিল। পরে তিনি আসল পুলিশ সদস্য। তার নাম মামুন বংশাল থানায় কর্মরত ছিলেন।
তার আগে রাজধানীর উত্তরায় অস্ত্র-গুলি ও মাইক্রোবাসসহ ভুয়া ডিবির ছয় সদস্যকে গেফতার করে। তারা ছিলেন, মো. শামীম হোসেন (৩০), আল আমিন (৩০), মো. সেন্টু (৩০), সুধির দাস (৩৯), আবু রায়হান (২৬) ও মো. লিটন (৩৪)। উত্তরা পশ্চিম থানাধীন সেক্টর-১০ এ ডিবি পরিচয়ে ডাকাতির প্রস্তুতির সময় তারা গ্রেফতার হয়। তাদের কাছ থেকে আগ্নেয়াস্ত্র, ম্যাগজিন, গুলি, ওয়্যারলেস সেট (ওয়াকিটকি), হাতুড়ি, লিবার, স্কচটেপ ও ডাকাতির কাজে ব্যবহৃত একটি নোয়াহ মাইক্রোবাস উদ্ধার করা হয়।
তার আগে ২০১৭ সালের ২৬ আগষ্ট ২০১৭ রাতে হাজারীবাগের সুলতানগঞ্জে ভুয়া র‌্যাবের অফিসার পরিচয় দানকারী আরশাদ উজ জামান (৩৭), ও রোজী আক্তার (২০) নামে দুইজনকে আটক করে। এ সময় তাদের কাছ থেকে র‌্যাবের জ্যাকেট,হ্যান্ডকাপ ও ওয়াকিটকি উদ্ধার করা হয়। ২০০৮ সালে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী থেকে চাকরিচ্যুত হয়ে নিজেকে সেনাবাহিনীর মেজর, ক্যাপ্টেন পরিচয়ে প্রতারণা করতো।
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, বড় অংকের টাকা লেনদেন করতে ডিবি পুলিশের সহায়তা নেবার আহ্বান জানানো হয়েছে।