সড়ক ও জনপদ বিভাগ নাটোর, টাঙ্গাইল পৌরসভা ও পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলায় বিভিন্ন উন্নয়নমুলক কাজে হরিলুট, দুদকের অভিযান

Uncategorized আইন ও আদালত

 !! দুদক এনফোর্সমেন্ট ইউনিট হতে গতকাল ৬ টি অভিযোগের বিষয়ে পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে এবং ৩ টি দপ্তরে অভিযান পরিচালনা করা সহ ৩ টি দপ্তরে পত্র প্রেরণ করা হয়েছে !!


নিজস্ব প্রতিবেদক ঃ  নাটোর জেলার সিংড়া উপজেলাধীন চৌগ্রাম-কালীগঞ্জ সড়কে অবকাঠামোর রক্ষণাবক্ষণের কাজের অংশ হিসেবে কার্পেটিং সড়ক সংস্কার কাজে ঠিকাদারের বিরুদ্ধে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহারের অনিয়মের অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশনের সমন্বিত জেলা কার্যালয় রাজশাহীর সহকারী পরিচালক মোঃ সোহাগ মিলুর নেতৃত্বে উপ-সহকারী পরিচালক মোঃ বোরহান উদ্দিন ও সহকারী পরিদর্শক মাহবুবুর রহমান এর সমন্বয়ে গঠিত এনফোর্সমেন্ট টিম গতকাল রবিবার ২৪ জুলাই অভিযান পরিচালনা করেছে। টিম, সড়ক ও জনপদ বিভাগ নাটোর কার্যালয়ের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলীকে নিয়ে সরেজমিন প্রকল্পের কাজ পরিদর্শন করে। উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী পরীক্ষার জন্য বিভিন্ন নমুনা সংগ্রহ করেন। টিম, উপজেলা প্রকৌশলীর কার্যালয় হতে প্রকল্প সংশিষ্ট রেকর্ডপত্র সংগ্রহ করেছে। উক্ত রেকর্ডপত্র পর্যালোচনা করে এবং নিরপেক্ষ প্রকৌশলীর প্রতিবেদন পাওয়ার পর কমিশন বরাবর বিস্তারিত প্রতিবেদন দাখিল করবে এনফোর্সমেন্ট টিম।

ঠিকাদারের বিরুদ্ধে প্রকৌশলীর সাথে যোগসাজশ করে ব্রিজ নির্মাণে অনিয়মের অভিযোগে দুদক জেলা কার্যালয় টাঙ্গাইলের সহাকারী পরিচালক মোঃ ফেরদৌস রহমান এর নেতৃত্বে কোর্ট পরিদশর্ক মো.জাহিদুল ইসলাম, উপ-সহকারী পরিচালক মো.মামুনুর রশিদ ও মো.জাহেদ আলম এর সমন্বয়ে গঠিত একটি এনফোর্সমেন্ট টিম টাঙ্গাইল পৌর এলাকার বেড়াডোমা-ওমরপুর সড়কের বেড়াডোমা এলাকায় অভিযান পরিচালনা করেছে। দুদক টিম সরজমিনে উক্ত এলাকা পরিদর্শন করে অভিযোগের সত্যতা পেয়েছে।অভিযান পরিচালনা কালে দেখা যায়, নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার আগেই ব্রিজটি মাঝখান দিয়ে দেবে দেবে গিয়েছে। স্পেসিফিকেশন বহির্ভূতভাবে সেতু নির্মাণ, গার্ডার ও স্লাব এর সেন্টারিং কাজে স্টিলের পাইপের পরিবর্তে গজারি, ইউক্যালিপটাস ও বাঁশের পাইল ব্যবহার করা, ঠিকাদারের দায়িত্বে অবহেলা ও সাইটে ঠিকাদারের প্রকৌশলী অনুপস্থিতি সহ নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহারের কারণে সেতুটি ধ্বসে পড়েছে। টাঙ্গাইল পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী শিব্বির আহমেদ আজমি বলেন, “ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে বারবার সতর্ক করা হলেও ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি তা অগ্রাহ্য করে নির্মান কাজ চালিয়ে গেছে”। স্থানীয়দের অভিযোগ প্রভাবশালী একটি মহল এই অনিয়মের সাথে সরাসরি জড়িত। অভিযোগের বিষয়ে বিস্তারিত রেকর্ডপত্র সংগ্রহ করে এনফোর্সমেন্ট টিম কমিশন বরাবরে দ্রুত প্রতিবেদন দাখিল করবে।


ব্রিজ নির্মাণে ঠিকাদার কর্তৃক নিম্নমানের নির্মাণ সামগ্রী ব্যবহারের অভিযোগের প্রেক্ষিতে দুর্নীতি দমন কমিশন, সমন্বিত জেলা কার্যালয়, পটুয়াখালীর সহকারী পরিচালক মোঃ রাসেল রনি, মোঃ মাইনউদ্দীন ও উপ-সহকারী পরিচালক সমীরন কুমার মন্ডল এর সমন্বয়ে কলাপাড়া উপজেলা,
পটুয়াখালীতে একটি এনফোর্সমেন্ট পরিচালনা করা হয়। এনফোর্সমেন্ট টিমের অভিযান চলাকালে টিম সরেজমিনে পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার মিঠাগঞ্জ ইউনিয়নের মধুখালী শাখা নদীতে নির্মাণাধীন পার্ডার ব্রিজের নির্মান কাজ পরিদর্শন করা হয়। রেকর্ডপত্র পর্যালোচনায় দেখা যায় যে, ২০১৮-১৯ অর্থ বছরে কাজের টেন্ডার ও কার্যাদেশ প্রদান করা হয়।
মেসার্স কাসেম কনস্ট্রাকশন ও মেসার্স পল্লী স্টোর্স (জেভি) ৩,২৭,৩৩,৯৭৫.৭৪ (তিন কোটি সাতাশ লক্ষ তেত্রিশ হাজার নয়শত পচাত্তর টাকা চুয়াত্তর পয়সা) টাকায় কার্যাদেশ প্রাপ্ত হয়। চুক্তি অনুযায়ী অক্টোবর আগস্ট ২০১৯ সালে প্রকল্পটি সমাপ্ত করার কথা থাকলেও পরবর্তীতে ঠিকাদারের আবেদনের প্রেক্ষিতে ৩০ আগস্ট ২০২১ সাল পর্যন্ত কাজের মেয়াদ বৃদ্ধি করা হয়। সরেজমিনে পরিদর্শনকালে স্থানীয় জনগন ব্রিজের কাজের জন্য মরিচাপড়া রড ও জমে যাওয়া সিমেন্ট ব্যবহার করা হয়েছে মর্মে জানায়। তৎপ্রেক্ষিতে স্থানীয় জনগণ ও প্রকৌশলীদের উপস্থিতিতে ঠিকাদারের সাইট রুমে প্রবেশ করে মরিচা পড়া রড ও জমে যাওয়া সিমেন্ট দেখা যায়। এ বিষয়ে এলজিইডি, কলাপাড়া, পটুয়াখালীর উপজেলা প্রকৌশলী মহর আলী ও উপ-সহকারী প্রকৌশলী মোঃ আবুল হোসেনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে তারা এ বিষয়ে কোন সদুত্তর দিতে পারেন নাই। সরেজমিনে ব্রিজে কাজের অনেক ত্রুটি পরিলক্ষিত হয়। ব্রিজের মূল অংশের কাজ সমাপ্ত হলেও দুই পার্শ্বের রেলিং ও অন্যান্য কাজ শেষ করা হয়নি। এছাড়াও ব্রিজের মূল স্লাভের কাজ হলেও দুই পার্শ্বের এপ্রোচ সড়কের কোন কাজই করা হয়নি।
প্রকল্পের কাজ প্রায় ৫০% বাকি থাকলেও ২১ নভেম্বর ২০২১ সাল পর্যন্ত প্রায় ৩,০৪,৮১,৭২৪ (তিন কোটি চার লক্ষ একাশি হাজার সাতশত চব্বিশ) টাকা ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের অনুকুলে ইতোমধ্যে প্রদান করা হয়েছে। অভিযান শেষ করে এনফোর্সমেন্ট টিম দুর্নীতি দমন কমিশন, সমন্বিত জেলা কার্যালয়, পটুয়াখালীতে ফিরে আসে এবং কর্তৃপক্ষকে সার্বিক বিষয়ে অবহিত করে। প্রকল্প সংশ্লিষ্ট কাগজপত্র পর্যালোচনা করে পরবর্তী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বিস্তারিত প্রতিবেদন কমিশনের নিকট প্রেরণ করবে এনফোর্সমেন্ট টিম।

এছাড়াও দুদক অভিযোগ কেন্দ্রে (হটলাইন-১০৬) আগত অভিযোগের প্রেক্ষিতে ব্যবস্থা গ্রহণপূর্বক কমিশনকে অবহিত করার জন্য ৩টি দপ্তরে দুদক এনফোর্সমেন্ট ইউনিট হতে পত্র প্রেরণ করা হয়েছে।


বিজ্ঞাপন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *